জিঙ্ক হয়তো খুব আলোচিত কোনো খনিজ নয়, কিন্তু শরীরের ভেতরে এর গুরুত্ব অপরিসীম। হরমোন থেকে শুরু করে ত্বক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের পেছনে এই খনিজটি নীরবে বিশাল ভূমিকা রাখে। জিঙ্কের ঘাটতি হলে শরীর নানা অস্বাভাবিক সংকেত দিতে শুরু করে — যেগুলো অনেক সময় নারীরা বুঝতেই পারেন না। নিচে নারীদের মধ্যে জিঙ্ক ঘাটতির কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
১. অনিয়মিত পিরিয়ড ও সন্তানধারণে সমস্যা
জিঙ্ক হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঘাটতি হলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে — দেরি, আগেভাগে শুরু হওয়া বা মাসিক না হওয়া। এমনকি এটি ডিম্বাণু নিঃসরণেও প্রভাব ফেলে, যার কারণে গর্ভধারণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
২. চুল ঝরা ও নখ ভাঙা
চুল পড়া বেড়ে যাওয়া, নখে সাদা দাগ বা ভঙ্গুরতা — এসবই হতে পারে জিঙ্ক ঘাটতির লক্ষণ। জিঙ্ক চুল ও নখের মূল উপাদান কেরাটিন তৈরিতে সহায়ক।
৩. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ও বিষণ্ণতা
জিঙ্ক স্নায়ু তন্ত্র ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। এর ঘাটতিতে হতে পারে মুড সুইং, রাগ, মন খারাপ বা হালকা বিষণ্ণতা।
৪. ত্বকের সমস্যা
বারবার ব্রণ ওঠা, ত্বকে শুষ্কতা, ফাটা বা র্যাশ — এসব হতে পারে জিঙ্কের ঘাটতির লক্ষণ। জিঙ্কের ঘাটতিতে ত্বক সহজে ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।
৫. বারবার অসুস্থ হওয়া বা ক্ষত সারতে সময় লাগা
জিঙ্ক ইমিউন সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঘাটতি হলে বারবার ঠান্ডা লাগা, সংক্রমণ হওয়া বা কাটা-ছেঁড়ার দেরিতে ভালো হওয়া দেখা দেয়।
৬. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা ক্ষুধামান্দ্য
জিঙ্কের ঘাটতিতে খিদে কমে যায়, খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায়, এমনকি হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে।
৭. পেটের সমস্যা যেমন ডায়রিয়া বা গ্যাস
জিঙ্ক অন্ত্রে প্রদাহ কমায় ও “লিকি গাট” প্রতিরোধে কাজ করে। ঘাটতি হলে ডায়রিয়া, গ্যাস বা হজমে সমস্যা দেখা দেয়।
৮. স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন
খাবারের স্বাদ হঠাৎ ফিকে লাগা বা গন্ধ ঠিকমতো না পাওয়া — এগুলিও জিঙ্কের ঘাটতির ইঙ্গিত।
৯. সারাক্ষণ ক্লান্তি ও মনোসংযোগে সমস্যা
যথেষ্ট ঘুমিয়েও সারাদিন ক্লান্ত লাগা বা মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা হতে পারে কম জিঙ্কের প্রভাব।
১০. মুখে ঘা ও জিহ্বায় সাদা প্রলেপ
জিঙ্কের অভাবে মুখে ঘা, সংবেদনশীল মাড়ি বা জিহ্বায় সাদা আবরণ দেখা দিতে পারে।
১১. চোখে সমস্যা ও আলোতে সংবেদনশীলতা
জিঙ্ক ভিটামিন এ-কে কাজে সাহায্য করে। ঘাটতিতে চোখে ঝাপসা দেখা, রাতকানা বা আলোতে চোখে সমস্যা হতে পারে।
১২. হাড় দুর্বল ও গাঁটে ব্যথা
জিঙ্ক হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি। ঘাটতিতে গাঁটে ব্যথা, দুর্বলতা বা হাড় ক্ষয় দেখা দিতে পারে।
কি করবেন জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে?
জিঙ্ক ঘাটতি মোকাবিলায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় রয়েছে:
সামুদ্রিক খাবার: ঝিনুক, কাঁকড়া, লবস্টার
মাংসজাত খাবার: গরুর মাংস, মুরগি
বাদাম ও বীজ: কুমড়ার বীজ, কাজু, সূর্যমুখীর বীজ
ডাল ও শিম: মসুর ডাল, সয়াবিন
দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, পনির
সতর্কতা: এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র তথ্যের জন্য। খাদ্য, সাপ্লিমেন্ট বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্তের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া
Leave a Reply