হাসপাতালে পোশাক বদল, গোপনে কলেজছাত্রীর ভিডিও ধারণের অভিযোগ!

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর বাজারে অবস্থিত বহুল আলোচিত মা জেনারেল হাসপাতালে কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীর পোশাক বদলের গোপন ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে। হার্টের ইসিজি করার আগে ক্লিনিকের দেয়া পোশাক পরার সময় গোপনে ছাত্রীর ভিডিও ধারণ করেন হাসপাতালের ম্যানেজার ইসমাইল হাসান।

গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে কাশীনাথপুরে অবস্থিত মা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। রোববার ঘটনাটি জানাজানি হয়। ভুক্তভোগীর ওই রোগী একটি কলেজের অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী। তিনি বাবা- মায়ের সাথে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন।

মা জেনারেল হাসপাতালের মালিক কাশীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর করিম খাঁন রুবেল। তার এ হাসপাতালটি অপচিকিৎসায় প্রসূতি, নবজাতক মৃত্যুসহ নানা অঘটনের জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে।

ভুক্তভোগীর বাবা জানান, তার মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ওই প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুস সবুরের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক ইসিজি এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। হাসপাতালের ম্যানেজার ইসমাইল হাসান তার মেয়েকে ইসিজি করার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে জানান, পোশাক পাল্টিয়ে ইসিজি এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। তাকে হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা পোশাক দেয়া হয়। ওই পোশাক পরতে হাসপাতালের বাথরুমে যেতে বলা হয়। ওই সময় ম্যানেজার ইসমাইল হাসান বাথরুমের দরজার উপর দিয়ে পোশাক বদলের ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার মেয়ে টের পেয়ে চিৎকার করেন। মেয়ে এসে তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানান। এ সময় আশে পাশে থাকা অন্যান্য রোগীর স্বজনরা মিলে অভিযুক্ত ম্যানেজারকে আটকে রাখেন।

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, তিনি হাসপাতালের মালিক রুবেল খানকে বিষয়টি জানান। রুবলেকে অনুরোধ করেন ম্যানেজারের কাছে যে ভিডিও আছে তা ডিলিট করার জন্য। কিন্তু রুবেল খান উল্টো তার ম্যানেজারকে হাসাপাতাল থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। পরে রুবেল খান স্থানীয় ক্যাডার বাহিনীকে ডেকে এনে ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন।

তিনি আরও জানান, ‘আমার মেয়ে অবিবাহিত এবং অনার্স- এ পড়াশোনা করছে। এখন যদি ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়, তাহলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।’

এবিষয়ে অভিযুক্ত ম্যানেজার ইসমাইল হাসান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

হাসপাতালের মালিক জাহাঙ্গীর করিম খাঁন রুবেল জানান, ওই ম্যানেজার পালিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আব্দুল বাতেন বলেন, এটা তারা গুরুতর অন্যায় করেছে।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন এ বিষয়ে এখনও থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান রোববার রাতে জানান, তিনি বিষয়টি রোববার সন্ধ্যায় জেনেছেন। তিনি বলেন, নারী রোগীদের ইসিজি বা আলট্রাসনোগ্রাম করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে তিনি এর আগেও ক্লিনিক মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। কাশীনাথপুরের ঘটনাটি ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তারপরও তিনি এ ঘটনাটি তাদের মত করে তদন্ত করবেন। সত্যতা পেলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *