শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া গুঞ্জন এবং তার দুবাই যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশে জোরালো আলোচনা চলছে। ৫ আগস্ট ছাত্র ও সাধারণ জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার পর শেখ হাসিনার ভারত গমনের খবর দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। দলীয় নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে, আর দলের অনেক নেতা-নেত্রীও আত্মগোপনে রয়েছেন বা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।
শেখ হাসিনার ভারত ছাড়ার গুঞ্জন নতুন করে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে। গুঞ্জন রয়েছে যে, তিনি ভারত ছেড়ে দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি দল ও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা নিজেই দলের শীর্ষ নেতাদের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন, কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে মায়ের অবস্থান পরিষ্কার করতে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেন। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দলটির অভ্যন্তরীণ সংকট ও নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার ভারত ত্যাগের বিষয়টি কীভাবে দল ও রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
সোমবার রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সজীব ওয়াজেদ জয় জানালেন, শেখ হাসিনার ভারত ছেড়ে যাওয়ার খবর সঠিক নয়।
জয় বলেন, ‘আমার মা ভারত ছেড়ে গিয়েছে বলে যে খবর শোনা যাচ্ছে সেটি সঠিক নয়। তিনি এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন।’ এর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ছাড়তে কোনো চাপ নেই।
যাই হোক, মাঝেমধ্যে শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। অনেকেই এটাকে ‘অডিও বিপ্লব’ বলছেন। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে অডিও বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কার হাতে দিচ্ছেন। এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র। নেতাকর্মীরাও চাচ্ছেন দলকে সংগঠিত করতে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ অডিও বার্তা হাসিনা বলছেন- কাকে দায়িত্ব দেব? যাকেই দেব সেই তো গ্রেফতার হয়ে যাবে। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, হাসিনা দলের কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করবেন পরিবারের মধ্যেই কাউকে বেছে নিতে।
দু’মাস হয়ে গেল শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ছোটবোন রেহানা। কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কাজের সূত্রে দিল্লিতে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে তিনিও দেখা করছেন। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করছেন। করছেন শলা-পরামর্শও। এ নিয়ে নানা গুজব তো রয়েছেই। ওদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। দলকে সংগঠিত করার তাগিদ দিচ্ছেন। ডাকসাইটে সাবেক এক মন্ত্রীকে দল গোছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, অঘোষিতভাবে।
সাংগঠনিক এ বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক আলোচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে দলের হাল ধরতে যাচ্ছেন বলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছে। তবে এ ধরনের গুঞ্জনকে অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা।
আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন সদস্য গণমাধ্যকে বলেছেন, দলের প্রয়োজনে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব দেওয়ার সময় এলে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্য থেকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচিত নেতৃত্বের বাইরে থেকে কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার নজির আওয়ামী লীগে নেই।
Leave a Reply