‘লজ্জা’ বিশেষণটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হতে পারে তা এখন নতুন করে ভাবা যেতে পারে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট কখনোই খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে আজ সেই মেজাজের কিছু ব্যাটিং দেখা গেলো। হায়দরাবাদের রান তাড়া করতে নেমে ১০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৯৪ রান করে বাংলাদেশ।
ওভার প্রতি ৯.৪ করে তুলেছে বাংলাদেশে। আগের দুই ম্যাচ তো বটেই, সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ফর্মের হিসেবে এই রান বেশ ভালোই। কিন্তু যেখানে প্রতিপক্ষ ভারত তুলেছে ২৯৭ রান, গড়েছে এক ডজন রেকর্ড। সেখানে ১০ ওভারে ৯৪ খুব ভালো কিছু না।
আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশ আটকে ছিল বরাবরের মতো সেই ১৩০ এর ঘরেই। এদিন লিটন কুমার দাস, তাওহীদ হৃদয়দের কল্যাণে সেটা টেনে নেয়া গেল ১৬৪ রান পর্যন্ত। কিন্তু তাতে লাভ হলো না, বরং নিজেদের ইতিহাসে রানের বিবেচনায় সবচেয়ে বড় হার দেখল টাইগাররা। বাংলাদেশ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ হারল ১৩৩ রানের বড় ব্যবধানে।
২৯৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম বলেই মায়াঙ্ক যাদবের বলে ফিরে যান পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে দুটি চার মেরেছেন তানজিদ হাসান। তৃতীয় ওভারে হাত খোলার চেষ্টা করেছেন নাজমুল হোসেনও। মায়াঙ্ক যাদবের প্রথম বলে মেরেছেন ছয়, পঞ্চম বলে চার। পরের ওভারেই অবশ্য তানজিদ তামিম কাট শট খেলে ক্যাচ দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে পরাগের হাতে।
রবি বিষ্ণয়কে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বল ওপরে তুলে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন। তবে লিটন দাস ছিলেন আগ্রাসী। একই ওভারে ৫ চারও মেরেছিলেন ইনিংসের শুরুতে। ২৫ বলে খেলা ৪২ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার। কিন্তু সবকিছু যেদিন বিপক্ষে। লিটন সেদিন বড় কিছু করতে পারলেন না। ৪২ রানেই থামলেন তিনি
ক্যারিয়ারের শেষ টি–টোয়েন্টিতে মনে রাখার মতো কিছু করতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। ৯ বল খেলে ১ চারে করে গেলেন ৮ রান। থামল ১৪১ ম্যাচের লম্বা এক ক্যারিয়ার। এরপর রিশাদ হোসেনের ডাক, শেখ মেহেদির ৩ রানের ভিড়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকল তাওহীদ হৃদয়ের ফিফটি। বাংলাদেশ তাতে পরাজয়ের ব্যবধান কমালো খানিকটা।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ভারত বাংলাদেশকে কাঁদিয়েছিল এক অর্থে। ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন ভারতের প্রায় সব ব্যাটারই। ২০ ওভারে ২৯৭ রান তুলেছে ভারত। সাঞ্জু স্যামসনের ব্যাট থেকে ৪০ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড। সূর্যকুমারের দুর্দান্ত ফিফটি। ১৮ বলে হার্দিক পান্ডিয়ার ৪৭ রান। বল হাতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে স্পেল তানজিম হাসান সাকিবের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩য় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের রানবন্যার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরণ এটি।
রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে স্মরণীয় একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ উপহার দিচ্ছে ভারত। স্যামসন-সূর্যকুমার ও হার্দিক পান্ডিয়ারা আজ সবমিলিয়ে মেরেছেন ২২টি ছক্কা ও ২৫টি চার। তাদের হয়ে ফরম্যাটটিতে ভারতের হয়ে দ্রুততম (৪০ বলে) সেঞ্চুরি করেছেন স্যামসন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৪৭ বলে ১১১ রান, সূর্যকুমার ৩৫ বলে ৭৫, হার্দিক পান্ডিয়া ৪৭ (১৮ বল) এবং রিয়ান পরাগ ৩৪ রান (১৩ বল) করেছেন। পাওয়ার প্লেতে এক উইকেট হারানো ভারতের রান ছিল ৮২, এরপর ১০ ওভারে ১৫০ এবং ১৪ ওভারে ২০০ রান তোলে তারা।
ভারতের এমন তাণ্ডবের দিনে বাংলাদেশের বোলার ও ফিল্ডারদের জন্য ভুলে যাওয়ার মতো দিন। ৫০–এর বেশি রান দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, তানজিম সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমান। এর মধ্যে তানজিমের দেওয়া ৬৬ রান ফরম্যাটটিতে কোনো বাংলাদেশি বোলারের সবচেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড। যদিও তিনি বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছেন।
Leave a Reply