নেট দুনিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় : আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনে ইন্দো-আমেরিকান পন্থীদের ‘ফর্মুলা’ ষড়যন্ত্র!

দেশের জাতীয় সংসদে দলগুলোর ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হলে সেই নির্বাচন স্বৈরশাসন ঠেকাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে দাবি করে দেওয়া এমন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এই পদ্ধতি প্রণয়নের দাবি তোলা হয়েছে। মূলত এই দাবিকে দেশের জনপ্রিয় দল বিএনপিকে ঠেকাতে ভারত-আমেরিকানপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনী’ বিষয়ে এক ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে একদল আলোচক আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। সমাজ গবেষণা কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

এদিকে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগ এখনও বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ভাটা নামলেও এই সংখ্যা ২৫ শতাংশের নিচে নামবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন না। সেই ক্ষেত্রে প্রফেশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অনুসারে আওয়ামী লীগ কমপক্ষে ৭৫ টি আসন পাবে সব সময়। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে গণহত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার এবং আগস্ট বিপ্লবে আন্দোলনকারীদের উপরে ভয়াবহ জুলুম নিপীড়নের প্রতিক্রিয়ায় যখন দেশব্যাপী প্রবল আওয়ামী লীগ বিরোধী চেতনা দেশের মানুষের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে, এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে ভোট চাওয়ার মত প্রার্থী সব আসনে আওয়ামী লীগ খুঁজে পাবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সর্বত্র মাঠে গিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবার মত নৈতিক অবস্থানে রয়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই অবস্থায় যদি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় তাহলে আওয়ামী লীগ শুধু মার্কার ভোটে অর্থাৎ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোটে আগামী সংসদে ৭০-৭৫ টি আসন পেয়ে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে পারে। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদকে পুনরায় রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে এই প্রস্তাব।

শামসুজ্জামান আরিফ লিখেছেন, আপনারা ভাবছেন, কুট-কৌশল করে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা যাবে। কিন্তু বলবো, সেটা হবে দুঃস্বপ্ন। বিএনপি যে কোন সময়ের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। দেশে যে কোন সময় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন তারেক জিয়া। কিন্তু ইন্দো-আমেরিকান-পন্থীরা যেকোনো মূল্যে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চায়। তাই তারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। সাথে যোগ দিয়েছে জামায়াত। তারা একেক সময় একেক ফর্মুলা উপস্থাপন করছেন। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নামে তারা বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। যেসব বুদ্ধিজীবী মূলত এখন বিএনপিকে ঠেকানোর নানা ফর্মুলা দিচ্ছেন তারা গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের দোষর হিসেবে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পেছনে তাদের তেমন কোনো অবদান খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখন তারা সুশীল সেজে পতিত স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে দেশকে জুলাই-আগস্টের চেয়ে ভয়াবহ আরেকটা গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। কারণ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও ত্যাগ ছিল সবচেয়ে বেশি।

এ নিয়ে জৈষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, জামায়াত যদি এই ধারণা করে থাকে যে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে না বা করতে পারবেনা- এমন পরিস্থিতির যদি সৃষ্টি হয় তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট তাদের প্রতীকে পড়তে পারে বা বিএনপি ঠেকাতে আওয়ামী লীগ দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের ভোটের রেশিও অনেক বেড়ে যাবে যাতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসেবে আগামী নির্বাচনে জামায়াত আওয়ামী লীগের সমর্থনে বা ভোটে সরকার গঠন করতে পারবে বা সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে, তাহলে সেটি জামায়াতের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাব বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

কেননা অতীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত যুগপৎ ভাবে বিএনপি বিরোধী আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে অঘোষিত সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মাত্র তিনটি আসনে জয়লাভ করেছিল। সেই নির্বাচনে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই পরাজিত হয়েছিল। যেখানে তার পূর্ববর্তী নির্বাচন ও পরবর্তী নির্বাচন বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ ভাবে অংশগ্রহণ করে যথাক্রমে ১৭ ও ১৮ টি আসনে জয়লাভ করেছিল। এতে প্রমাণিত হয় আন্দোলনের স্বার্থে ব্যবহার করলেও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের ভোট দাঁড়িপাল্লা মার্কায় পড়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

রবি মিয়া বলেছেন, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এমন একটি ধারণা যাতে, রাজনৈতিক দলগুলো আসন ভিত্তিক প্রার্থী না দিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জনগণ দলীয় মার্কায় ভোট প্রদান করবে। এতে যে দল নির্বাচনে মোট কাস্টিং ভোটের যত শতাংশ ভোট পাবে জাতীয় সংসদের মোট আসনের তত শতাংশ প্রতিনিধিত্ব তারা পাবেন। অর্থাৎ যদি কোন দল মোট ভোটের দশ শতাংশ পান তাহলে তিনি বর্তমান ব্যবস্থায় ৩০০ আসনের সংসদে ৩০টি আসন পাবেন। জামায়াতের এই প্রস্তাব বাংলাদেশ পরাজিত ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে। বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না।

মইনুদ্দিন লিখেছেন, বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের অসহনীয় গুম খুন নির্যাতন সহ্য করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আজকে যারা বিভিন্ন সভা সেমিনারে জনপ্রিয় দল বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য নানা ফর্মুলা দিচ্ছেন, তাদের এই গণঅভ্যুত্থানে কী অবদান ছিল তা জাতি জানতে চাই। তাদের অনেকেই ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত। অতএব বিএনপিকে ঠকানোর কোন ফন্দি-ফিকির দেশের মানুষ মেনে নেবে না।

সীমান্ত লিখেছেন, জামায়াতের আমীর আজকে‌ দেখলাম এক প্রোগ্রামে ইউটার্ন নিয়েছেন। আগে তিনি আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজকে আবার বললেন দেখলাম, আওয়ামী লীগের আইনেই তাদের বিচার করা হবে। তার কাছ থেকে এরকম দুই ধরনের কথা মানুষ প্রত্যাশা করে না। আর জামায়াত ভাবছে, আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হলে তারা বিরোধী দল হবে। কিন্তু তারা তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।

জিনারুল ইসলাম লিখেছেন, দীর্ঘদিন আমি জামাতের রাজনীতির সাথে ছিলাম। কিন্তু তাদের কোন পদক্ষেপ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করে আমি দীর্ঘদিনের দল ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করবো না। আমি মনে করি, জামাতের কোনো উদ্যোগে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হলে ফাসিতে প্রাণ যাওয়া শীর্ষ নেতাদের সাথে বেইমানি করা হবে।

মাকসুদুল আলম লিখেছেন,
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে নরপিশাচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। যার ধারাবাহিকতায় দলটি হায়েনার মত আচরণ করে বারবার বারবার ক্ষমতায় এসে জামায়াতের সকল কেন্দ্রীয় নেতার ফাঁসি কার্যকর করে আওয়ামী সরকার এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। জামায়াত আবার আওয়ামী ফাঁদ এ পা দিচ্ছে মনে হয় যা পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবে। সুতরাং সংসদীয় পদ্ধতিতেই নির্বাচনের পরিকল্পনা করার অনুরোধ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *