মৃত্যুর আগে বাবাকে যা বলে গিয়েছিলেন জিপিএ ৪.২৫ পাওয়া সেই নাফিসা!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাফিসা হোসেন মারওয়া (১৭) এবারের এইচএসসি পরিক্ষায় জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নাফিসা তার বাবাকে বলে গিয়েছিলেন ‘আব্বু আমি মরে যামু, লাশটা নিও।’

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহত নাফিসার বাবা আবুল হোসেন। তবে এ আনন্দের দিনে তার পরিবারের লোকজনসহ শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে বিরাজ করছে বিষাদের ছায়া। অনুভব করছে নাফিসের শূণ্যতা।

নাফিসার বাবা আবুল হোসেন কালের কন্ঠকে বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে মেয়ের ফোন থেকে এক ছেলে জানায়, আমার মেয়ের বুকে গুলি লেগেছে। মেয়েটা সোয়া ২টার দিকে আমারে ফোন করে বলে, আব্বু আমি মরে যামু, লাশটা নিও। এটাই মেয়ের শেষ কথা ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হলে জানতে পারি নাফিসা জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

নাফিসার বাবা আরো জানায়, ‘দুই বছর ধরে তার মা কুয়েত প্রবাসী। মেয়ের লেখাপড়ার যেন কোনও সমস্যা না হয়, সেই জন্য রান্না করতে দিতাম। চায়ের দোকান দিয়ে যত উপার্জন করেছি, মেয়ের লেখাপড়ায় তা দিয়েছি।

মেয়ে আমাকে না জানিয়ে উত্তরায় যেত আন্দোলনে। সারাদিন দোকানে থাকায় খোঁজ পেতাম না। প্রতিবেশীর কাছে জেনে মেয়েকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করি। এরপরও মেয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে যেত। ৩ আগস্ট আমাকে বলল, লেখাপড়া নেই, ঘরে থেকে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সাভারে মামার বাসায় বেড়াতে যাবে। ভেবেছিলাম, সাভারে গেলে আন্দোলনে যাবে না। সাভারের বক্তারপুরে মামার বাসায় গিয়ে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবার আন্দোলনে যায়। ৪ আগস্ট দুপুরে মেয়েকে ফোন করলে গোলাগুলির শব্দ শুনি। মেয়ে তখন স্বীকার করে, আন্দোলনে আছে। আর পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট সাভার থানা রোডে যায় নাফিসা। তারপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ফোনে বলল, শেখ হাসিনা পালাইছে। আব্বু, আমি গণভবন যামু। আমারে বাধা দিও না। আমি বললাম, শেখ হাসিনা পালাইছে, তাতে তোমার বাপের কী! তোমার বাবাতো করে চায়ের দোকানদারি।’

জানা যায়, নাফিসা শৈশব কেটেছে গাজীপুরের টঙ্গী পুর্ব থানার দত্তপাড়া চানকিরটেক এলাকায়। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের মেয়ে। নাফিসা টঙ্গীর বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেছে। তারপর সে সাভার এলাকায় নানীর বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতেন। তাকে সাভার ল্যাবরেটরি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি করানো হয়। সেখানে এক বছর লেখাপড়া করেন। পরে তাকেমারওয়া। উত্তীর্ণ শিক্ষা টঙ্গীর সাহাজ উদ্দিন সরকার স্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি করা হয়। এবারের এইচএসসি পরিক্ষায় ৪.২৫ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন নাফিসা হোসেন র্থীরা যখন পরীক্ষার ফল নিয়ে উল্লাস করছেন, তখন নাফিসা চিরনিদ্রায় শায়িত।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগষ্ট বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সাভার থানা রোড এলাকার পাকিজার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাফিসা হোসেন মারওয়া। এ ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর তার বাবা আবুল হোসেন বাদি হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার শনাক্ত আসামি ১৪৩ জন ও অজ্ঞাতনামা আসামি ১৫০/২০০ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *