রায়ের সমালোচনা সবসময়ই করা যায়: বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস!

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেছেন, রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের আছে। একাডেমিক আলোচনা কোনটা, কল্যাণার্থে আলোচনা কোনটা আর আদালত অবমাননা কোনটা- এর পার্থক্য আমাদের বুঝতে হবে। রায়ের সমালোচনা একাডেমিক উদ্দেশ্যে, কল্যাণার্থে এবং সংশোধনের উদ্দেশ্যে সব সময়ই করা যেতে পারে।

শনিবার কারা অধিদফতরে ‘কারাগার সংস্কার: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি।

কর্মশালায় শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, কারাগারগুলোকে সংস্কার করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। যারা বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন তাদের অনুরোধ করবো সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য। গত ১৫ বছর এসব নিয়ে কথা বলা যায়নি। এখন সুযোগ হয়েছে। এখন গুম-খুন ভয়ের সংস্কৃতি নেই।

তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই মিলে একটি পরিবার। কারাগার-আদালত সর্বোপরি সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে একসঙ্গে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। আলাদাভাবে সম্ভব না। কারাগারের সংস্কারের জন্য একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। আদালতগুলোতে যেন নির্যাতিত মানুষের সংখ্যা কমে আসে, বিচারগুলো যেন হয়।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, কারা আইন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। মানবিকভাবে কারাগারগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। জেল কোড ও ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি। কারাগারে দুর্নীতির সিন্ডিকেট রয়েছে। কারাগারে অবৈধভাবে সেবা কেনার সুযোগ আছে। সেগুলো বন্ধ করতে হবে। কারণ বন্দিরা সবাই সমান।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ কারাবন্দিদের সংশোধনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কতোদিন কারাগারে রাখা যাবে, কীভাবে জামিন হবে তার নীতিমালা করা প্রয়োজন। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ১৭টি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে সব কারাগারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে এখন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, কারাগার মূলত সংশোধনাগার। কারাগারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধীর সংস্কার বা সংশোধন। জেলগুলো মূলত ১৮৬০ সালের জেল কোড, দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ও দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট আইনসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব আইন ঔপনিবেশিক আমলের। এসব আইন সংশোধন করে জেল ব্যবস্থা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি আইনগত কাঠামো ও যুগোপযোগী, ডাটাবেজ সংরক্ষণ ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতি, চিকিৎসাসেবা ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ সংক্রান্ত আইন আরও যুগোপযোগী করতে প্রস্তাব করেন। সেইসঙ্গে খাদ্যের মান বৃদ্ধি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ, নারী, শিশু ও প্রবীণ বন্দিদের অধিকার নিশ্চিত করা, পরিবার ও সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত করা, কর্মসুবিধা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম, প্রজননের অধিকার নিশ্চিত করা এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তাব করেন।

তিনি আরো বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে এবং কারাগারে নির্জন স্থানে রাখা আইনের লঙ্ঘন। চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না।

এলআরএফ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাবেদ আখতার। কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. শামসুল হায়দার সিদ্দিকী প্রমুখ। ফোরামের অর্ধশত সদস্য কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *