ঋতু পরিক্রমায় এখনো তীব্র গরম বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন খুবই বিপর্যস্ত। এ সময় বাসা-বাড়ি থেকে বের হলে তৃষ্ণা পাওয়া ও ঘাম হয় বেশি। এর থেকেও বিরক্তিকর হচ্ছে ঘাম থেকে ঘামাচি বা হিট র্যাশের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়া। গরমে যারা কর্মজীবী এবং যারা বেশি কাজ করেন, তাদের ঘামাচি একটু বেশিই হয়।
প্রায় সব বয়সী মানুষেরই ঘামাচি হয়। সম্প্রতি এ ব্যাপারে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ও মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ইমরান হাসান। এবার তাহলে এই চিকিৎসকের ভাষ্যমতে ঘামাচি কেন হয় ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ঘামাচি কী ও হওয়ার কারণ: গরমের সময় অনেকেরেই ত্বক লাল হয়, ফুসকুড়িও হয়ে থাকে, আর একে ঘামাচি বা হিট র্যাশ বলা হয়। এটি এক ধরনের চর্মরোগ। কারও ঘামাচি হলে চুলকানি, ঘাম থেকে জ্বালা অনুভূতি হয়ে থাকে। যদিও পুরো শরীরেই ঘামাচি হয়ে থাকে। তবে পিঠে, বুকে, কপাল, ঘাড় ও গলায় ঘামাচি বেশি হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে ঘামাচি বেশিই হয়ে থাকে।
সাধারণত ত্বকের নিচে থাকা ঘর্মগ্রন্থিতে স্টেফ এপিডারমাইডিস নামক এক প্রকার জীবাণু থাকে। গরমের সময় ঘাম বেশি হয়ে থাকে। ময়লা, ধুলাবালি বা কোনো কারণে যদি ঘর্মগ্রন্থির মুখ আটকে যায়, তাহলে সেখান থেকে ঘাম বের হতে পারে না। ফলে সেসব জায়গা থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা প্রদাহের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর ওই সময় লালচে গোটা বা ফুসকুড়ির দেখা দেয়। যা ঘামাচি।
ঘামাচি কত ধরনের: এ চিকিৎসকের মতে, সাধারণত ঘামাচি চার ধরনের। প্রথমত মিলিয়ারিয়া ধ্রুবা, এটি হচ্ছে ত্বকে র্যাশের মতো লাল লাল গুটি হয়। দ্বিতীয়ত মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা, এ জাতীয় ঘামাচি পানি জাতীয়, অনেকটা পানির ফোস্কার মতো। যা সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দেয়। তৃতীয়ত মিলিয়ারিয়া পাস্তুলোসা, এ ধরনের ঘামাচি ইনফেকশনের পর্যায়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘামাচি থেকে পুঁজ সৃষ্টি হয় এবং যা থেকে ইনফেকশন হয়ে থাকে। চতুর্থত মিলিয়ারিয়া প্রোফান্ডা, এই ঘামাচি ত্বকের গভীর থেকে হয়ে থাকে। যা খুব একটা দেখা যায় না কারও ক্ষেত্রে। আমাদের দেশে প্রথম তিন ধরনের ঘামাচির দেখা মিলে। তবে ধ্রুবা ও ক্রিস্টালিনার ধরন বেশ দেখা যায়।
ঘামাচি হলে করণীয়: কারও ঘাম বেশি হলে যত দ্রুত সম্ভব পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। আশপাশে থাকা নরম কাপড়, তোয়ালে বা সঙ্গে থাকা রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে নিতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। দিনে দুইবার গোসল করতে পারলে ভালো। তবে গোসলের পানি অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রার হতে হবে। শরীর পরিষ্কার রাখার জন্য গোসলে সাবান ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষেত্রে কম ক্ষারযুক্ত বা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান ব্যহার বেশ উপকারী।
অনেকেরই মাথায় চুলের গোড়ায় ঘাম বেশি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। তারা নিয়মিত শ্যাম্পু করতে পারেন। এতে ইনফেকশনের ভয় কম থাকবে। ঘামাচি হলে নখ দিয়ে স্পর্শ না করাই ভালো। কেননা, নখ দিয়ে ঘামাচি আঁচড় দিলে বা চুলকালে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা তাকে। তবে ঠান্ডা পানিতে একটি নরম কাপড় ভিজিয়ে রেখে আক্রান্ত স্থানগুলো মুছে নিতে পারেন। এতে ঘামাচির পরিমাণ কিছুটা কমে।
ঘামাচিরোধক বিভিন্ন ধরনের ট্যালকম পাউডার রয়েছে। ক্ষতিকর উপাদান নেই এমন পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তবে পাউডার নেয়ার আগে ভালো করে শরীরের ঘাম মুছে নিতে হবে। আরমদায়ক বলে একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পাউডার নেয়া যাবে না। এ থেকে আবার ত্বকের লোমকূপ আটকে যেতে পারে। আবার অ্যান্টিসেপটিক লোশন, হোম রেমিডি বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
বাড়ির ছোট শিশুদের গরমে ডায়াপার কম কম পরানোই ভালো। বেশি পরালে ঘামাচি হতে পারে। শিশুকে সবসময় আলো-বাতাসযুক্ত জায়গায় রাখুন। তবে রোদে রাখা যাবে না। ছোট থেকে বড়, সবাইকে ঢিলেঢালা ও পাতলা সুতির পোশাক পরতে হবে। এছাড়া ঘামাচির কারণে যদি সমস্যা তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।
Leave a Reply