‘আমি জামায়াত করি, ছেলে ছাত্রলীগে পদধারী ছিল আমি জানতাম না’

আন্দোলনের শুরুর দিকে রাব্বি ঢাকায় আইইএলটিএস এর প্রস্তুতি কোচিং করছিলেন এবং পরবর্তীতে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানান তার বাবা শওকত আলী শিকদার।

তিনি বলেন, আমি ঢাকায় থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ ঠিকভাবে বলেনি কোন মামলা দিয়েছে। শুধু বললো ১০২, ৩৪ সহ কয়েকটা ধারা দিয়েছে। তারা বললো, তাড়াতাড়ি জামিন হয়ে যাবে। আর গন্ডগোলের সময় তো রাব্বি বাসায় ছিল। কোনো আন্দোলনেই যায়নাই। আন্দোলনের পর আগস্টের শেষের দিকে কোচিং খুললে ঢাকায় যায়। আমি জামায়াত করি অনেক আগে থেকেই। ছেলে যে ছাত্রলীগে পদধারী সেটা আমি জানতাম না। আমি না করেছিলাম এসব করলে। ছেলে বললো, হলে ভাইদের সাথে থাকতে হয়। তাই টুকটাক ছাত্রলীগ করতে হয়।

ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা ফজলে রাব্বি। শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১১ টার দিকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

এর আগে ১৮ জুলাই তিনি এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন। একইসঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেন। ৫ জুলাই শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আনন্দ মিছিলেও অংশ নেন রাব্বি।

ফেসবুকের রাজনীতি থেকে অব্যাহতি উল্লেখ করে দেওয়া স্ট্যাটাসের এক অংশে তিনি লিখেন, আমি বাংলাদেশের সকল নোংরা রাজনৈতিক জীবন থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিলাম। আমি সাধারণ ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকবো এবং সবসময়ই ন্যায়ের পক্ষে থাকবো,অন্যায় কে অন্যায় বলা আমার বাক স্বাধীনতা।

ফজলে রাব্বির রুমমেট তানভীন বলেন, ফজলে রাব্বি আমার রুমমেট ছিল। সে মে-জুন মাসের দিকে ঢাকায় চলে যায়। সে বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঢাকায় আইইএলটিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আন্দোলনের সময় আমি ক্যাম্পাসে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ছিলাম। ওকে ক্যাম্পাসে কোথাও দেখিনি। তাছাড়া সে আন্দোলনের পক্ষে ছিল। ছাত্রলীগ থেকেও পদত্যাগ করেছিল।

রাকিব হাসান নামে তার এক সহপাঠী বলেন, আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আমার বন্ধু ফজলে রাব্বি সিকদার গতকাল রাতে গ্রেফতার হয়েছে আন্দোলনে ছাত্র হামলার অভিযোগে। একই ডিপার্টমেন্ট ও নিজ জেলার থাকার ফলে 99তার সম্পর্কে আমরা ভালো করে চিনি ও জানি। ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার কারণে দেখেছি ও আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে ছিলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিল।
১৮ জুলাইয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ছাত্র লীগ থেকে পদত্যাগ করেছে পোষ্টে দেখা যাচ্ছে এবং একদফার সময়েও আন্দোলনের সাথেই ছিল। এই আটক-গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাই।

প্রসঙ্গত, ফজলে রাব্বি শাখা ছাত্রলীগের উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার ফজলে রাব্বী টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী গ্রামে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ছাত্র আন্দোলনের সময় ফজলে রাব্বী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলায় সরাসরি অংশ নেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানার এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে গোপন সংবাদে ফজলে রাব্বীর অবস্থান জানতে পেরে শনিবার রাতে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে অভিযান চালিয়ে ৩৯ নম্বর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মাদ হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মারধরের নেতৃত্বে ছিলেন ফজলে রাব্বী। আন্দোলনে তার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *