মার্শাল ল’ (Martial Law) বা সামরিক আইন বলতে, সামরিক পর্যায়ের যে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্তার শাসন পরিচালিত হয় তাকে বুঝায়। সামরিক শাসনে শাসনকর্তা হন সামরিক বাহিনীর প্রধান। পূর্ববর্তী সরকারের যেকোন ধরনের প্রশাসনিক, আইনি ও বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার বাতিলকরণের মাধ্যমে সামরিক আইন দ্বারা ক্ষমতা দখল করে উক্ত সামরিক প্রধান। সাময়িকভাবে সাধারণ শাসকদের যেকোন ব্যর্থতার কারণে তাদের হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা সামরিক শাসকের হাতে যায় এবং কার্যকরী হয়।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন কোন বিধিবদ্ধ আইন নয়। কেননা সামরিক আইনের সাথে রাষ্ট্রের পার্লামেন্টের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। যেহেতু এই আইনের কোন বিধিবদ্ধতা নেয় সেহেতু অনেক আইন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সামরিক আইন কোন আইন নেয়।
মূলত, রাষ্ট্রের সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন বলবৎ হয়। সুতরাং সামরিক আইন জারীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নাগরিকের কোন ধরনের মৌলিক অধিকার খর্ব হয় না।
উদাহারণস্বরুপ বলা যেতে পারে, নিরাপত্তাজনিত কারনে বা জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে সামরিক আইনের মাধ্যমে সামরিক শাসন চালু হতে পারে।
উপরিউক্ত অলোচনা থেকে সামরিক আইন সম্পর্কে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় –
১. সামরিক আইন কোন বিধিবদ্ধ আইন নয়।
২. সামরিক আইনের সাথে পার্লামেন্টের কোন সংশ্লিষ্টতা নেয়।
৩. রাষ্ট্রের সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন বলবৎ হয়।
৪. এই আইনের কারনে জনগনের সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হতে পারে।
৫. জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে সামরিক আইনের মাধ্যমে সামরিক শাসন চালু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এবং জাপানে দেশের পুনঃর্গঠনে সামরিক শাসন চালু হয়।
সেনা আইন (Military Law) এবং সামরিক আইন (Martial Law) এর মধ্যে পার্থক্য-
মূলত সেনা আইন এবং সামরিক আইন প্রায় একই বিষয় হলেও সংজ্ঞা এবং কার্যকারীতা হিসেবে পার্থক্য বিদ্যমান।
সেনা বিভাগের আচরণ নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রচলিত নিয়ম-কানুনকে সেনা আইন (Military Law) বলা হয়। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সেনা আইন প্রযোজ্য হয়।
আবার, সামরিক আইন বলতে বহিরাক্রমন, অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ, দাংগা হাংগামা প্রতিহত করে শান্তি শৃংখলা রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনী কর্তৃক যে বিশেষ জরুরী অবস্থা জারী করা হয় তাকে সামরিক আইন (Martial Law) বলা হয়।
লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট চট্টগ্রাম।
Leave a Reply