আসন্ন রমজানকে টার্গেট করে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হচ্ছে। রোজাকে ঘিরে পুরোনো সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয় হয়েছে। কোম্পানিগুলো মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। ডিলারের কাছে কমিয়ে দেয়া হয়েছে সরবরাহ। আর ডিলার থেকে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বাড়ানো হচ্ছে দাম।
তবে বাড়তি দামেও চাহিদামতো ভোজ্যতেল পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। এতে বাজার থেকে এক প্রকার উধাও হচ্ছে সয়াবিন তেল। পণ্যটির দাম সহনীয় রাখতে গত ১৭ অক্টোবর পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। আর উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেয়া হয়।
তবে মাসের ব্যবধানে লিটারে ২০ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন খুচরা বাজারে ১৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর লিটারে ৩ টাকা বেড়ে বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকা। সঙ্গে ১৫ দিনের ব্যবধানে পাম তেল ও রাইসব্রান তেলের দরও লিটারে ৬ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। এতে আসন্ন রোজায় বাজার আরো অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, প্রতিবছরের মতো এবারো রমজানে বাড়তি দরেই ভোজ্যতেল কিনতে হবে।
নতুনবাজারের মুদি দোকানি কাদের তালুকদার বলেন, ২ সপ্তাহ আগেও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৯০-৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। আর খুচরা পর্যায়ে ৮১৮ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররা অল্প পরিমাণে সরবরাহ করছেন। সংকট দেখিয়ে এখন ৮১০ টাকা দিয়ে বিক্রি করছেন তারা। তবে সরকার নির্ধারিত পণ্যের গায়ের লিখিত খুচরা মূল্য ৮১৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এক লিটারের বোতলজাত তেলেও একই অবস্থা। লিটারে সয়বিন তেল ১৬৭-১৭০ টাকা খুচরা মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ তেল ডিলারদের কাছ থেকে ১৬২ টাকা দিয়ে কিনতাম। এখন ১৬৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। রূপচাঁদা, তীর, বসুন্ধরা, ফ্রেশসহ সব কোম্পানি একই রেট ধরে দিচ্ছে।
দেশে যেসব ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়, এর প্রায় সবকটির দামই আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ১০৫ ডলার। গত আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১ ডলারে। সেপ্টেম্বরে আবার কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৪৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে সার্বিকভাবে এর দাম নিম্নমুখী। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে এর দাম ঊর্ধ্বমুখী।
জাহাজ ভাড়াসহ অন্য পরিবহণ খরচ কমেছে। দেশে ডলারের দামও কমেছে। আগে আমদানিতে প্রতি ডলার কিনতে হতো সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা করে। এখন তা কমে ১২০ টাকায় নেমে এসেছে। এসব কারণে আমদানি খরচ কমেছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই আমদানি পণ্যের দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে দাম কমেনি। উলটো আরো বেড়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় মূল্য বৃদ্ধিতে আসন্ন রোজায় বাজার আরো অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা।
Leave a Reply