‘ফাঁসির দড়িতে হাসনাত না, সবার আগে ঝুলবে বিএনপি-জামায়াত’

সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্রদের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সময় টেলিভিশনের

নুর বলেন, ‘এই সরকার যদি ব্যর্থ হয় তাহলে ফাঁসির দড়িতে হাসনাত না, আগে যাবে বিএনপি জামায়াতের লোকেরা। তারপর তিন নম্বর রাউন্ডে যাবে ভিপি নুর বা গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। তারপরে ছাত্ররা।’

এর কারণ হিসেবে নুর বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো পলিটিক্যাল বেস নাই, স্ট্র্যাকচার নাই। ছাত্ররা যতোই ফ্রন্টে থাকুক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সবাই জানে আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াত, রাজনৈতিক দলগুলো; গত পাঁচ-ছয় বছরে যে একটা যে বিপ্লবী বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরি হয়েছে, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে, হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীল তাণ্ডব দেখেছে। এগুলোই তাদের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত রাজপথে তারা এর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।’

গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ফেসবুকে হাসনাত লিখেন, ‌রাজনীতিবিদরা হাত মেলাচ্ছে, আর বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়ি এগিয়ে আসছে।

পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত বলেন, ‌‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একদফা (শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি) হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাদের (রাজনৈতিক দলগুলোর) সংবিধানপ্রীতি, মুজিবের ছবি সরানোর কারণে আমরা দেখলাম যে, গত ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য এই সংবিধানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা একটি দলের মাঝে এখন একটা প্রীতি দেখা যাচ্ছে। দেখলাম যে একটা বক্তব্য দেয়া হয়েছে যে, এটা (শেখ মুজিবের ছবি সরানো) ঠিক হয়নি। মোস্তাকের সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে যে, মোস্তাক এই কাজ করেছিল। এই বিষয়গুলো দুঃখজনক।’

এছাড়া রাজনীতিবিদরা অগ্রজ এবং অনুজের মাঝে বিভাজন তৈরি করছে বলেও মনে করেন তিনি। বর্তমান সংবিধানের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাসনাত।

তিনি বলেন, এই সংবিধানের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। অথচ এই সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেই সরকার শপথ নিচ্ছে। এই বিষয়গুলো কোথাও না কোথাও বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটে ঘাটতি তৈরি করছে বলে উল্লেখ করেন হাসনাত।

রাজনীতিবিদদের হাত মেলানোর বিষয়ে হাসনাতের বক্তব্য প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‌‘হাসনাতের কথাটা আংশিক সত্য। কিন্তু সব রাজনীতিবিদ হাত মেলাচ্ছে না। সব রাজনীতিবিদ আওয়ামী পুনর্বাসনের পক্ষে না।’

এক্ষেত্রে সরকারের দিকেও অভিযোগের তীর ছোড়েন নুর। বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের হত্যা মামলার আসামি, ফ্যাসিবাদের দোসরেরা নিয়োগ পাচ্ছে।’

ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নুর। বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তাহলে কাজ কী? ছাত্রদের দুজন আগেই উপদেষ্টা হয়েছে। আরও একজন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর বাইরে আরও কিছু বিশেষ সহকারী আছে। ছাত্ররা তো সরকারেরই অংশ। এখন বিষয়টা কী আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির মতো হয়ে গেল? তারাই সরকারে আবার তারাই বিরোধী দলে। তারাই সরকার থেকে আবার সরকারের বিরোধিতা করে সেনসেশন তৈরি করবে। মানুষ বিভ্রান্ত হবে। আবার রিজভী ভাইয়ের একটা বক্তব্য দিয়ে চাপে পড়ে সেই বক্তব্য আবার সংশোধন করা লাগে। মানে পরিস্থিতিটা এরকম যে, মানুষকে তো বিভ্রান্ত করছে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *