যেভাবে, যে পথে দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা!

তেজগাঁও কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ফ্লাই করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘সি-১৩০ জে’ বিমানে। বিমানের পাইলট ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শামীম রেজা ও উইং কমান্ডার গোলাম রসূল চৌধুরী।

গণভন থেকে গাড়িতে করে কুর্মিটোলা যাওয়ার জন্য প্রথমে জেদ ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে নিষেধ করা হলেও তিনি গাড়িতে ওঠেন এবং গাড়িবহর গণভবন থেকে কুর্মিটোলার উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু গাড়িবহরের অগ্রগামী ক্লিয়ারিং অফিসার (কর্নেল পদমর্যাদার) জানান, সামনে বড় মিছিল থাকায় গাড়িবহর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন গাড়িবহরে থাকা এসএসএফের একজন অপারেশন অফিসার বলেন, আমরা গুলি করে করে এগিয়ে যাব। তবে গাড়িবহরে থাকা জুনিয়র অফিসাররা বলেন, ঝুঁকি নেয়া আমাদের ঠিক হবে না। মবের সামনে পড়লে সবাই মারা যেতে পারি।

এরপর পরিস্থিতি বদলে গিয়ে গাড়িবহর ঘুরিয়ে গণভবনের পেছনে বাণিজ্যমেলার মাঠে (আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশে) নেয়া হয়। এখানেই রাশিয়ার তৈরি হেলিকপ্টার (এমআই-১৭) কল করে এনে প্রস্তুত রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী, তার স্ত্রী এবং একটি মেয়েশিশু (সম্ভবত তারেক সিদ্দিকীর পরিবারের সদস্য) হেলিকপ্টারে ওঠেন। হেলিকপ্টারটি সেখান থেকে কুর্মিটোলায় রওনা হয় এবং ১২টা ৩০ মিনিটে কুর্মিটোলায় পৌঁছায়।

কুর্মিটোলায় পৌঁছানোর পর, বেস কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে থাকা এয়ার ভাইস মার্শাল এবিএম আউয়াল শেখ হাসিনাকে রিসিভ করেন। এ সময় উইং কমান্ডার জাকি আনোয়ার গণভবন থেকে শেখ হাসিনার ১৪টি স্যুটকেস বিমানে ওঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় কারো সঙ্গে কথা বলেননি, শুধু স্যুটকেসগুলোর খোঁজ নিয়েছেন, সবগুলো বিমানে উঠেছে কিনা। তার সঙ্গে বিমানে আরো ওঠেন ডিজি এসএসএফ, এসএসএফের তিন থেকে চারজন কর্মকর্তা এবং ফ্লাইট লে. পদবির একজন লেডি কর্মকর্তা।

কুর্মিটোলা পৌঁছানোর ১০ মিনিটের মধ্যে, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তারেক সিদ্দিকীকে নিয়ে বিমানটি উড্ডয়ন করে। এ সময় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমানের ওঠানামা বন্ধ করে দেয়।

‘সি-১৩০ জে’ বিমানটি ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে উড্ডয়ন করে, যাতে রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ সংযোগ না হয়। সাধারণত বিমানটি নর্থবেঙ্গল হয়ে ঘুরে যায়, কিন্তু এই বিমানটি আকাশে উঠেই ত্রিপুরার (আগরতলা) দিকে চলে যায়, যাতে সীমান্ত পার হতে অল্প সময় লাগে। এর মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে বিমানটি সরাসরি দিল্লি চলে যায় এবং উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নামল।

হিন্দন বিমানঘাঁটিতে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। জানা গেছে, হাসিনা সেখানেও অজিত দোভালকে ঢাকায় আক্রমণ করতে বলেন।

হিন্দন ঘাঁটিতে নামানোর পর, রিফুয়েলিং করে বিমানটি কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এর আগে কয়েক দফায় ঢাকায় আসেন। বিশেষ বিমানে করে তিনি আসতেন এবং তার আসা-যাওয়ার কথা গোপন রাখা হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *