কিয়ামত কখন হবে, তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তবে নবীজি তার উম্মতকে সতর্ক করার জন্য কিয়ামতের আলামত নিয়ে বারবার আলোচনা করেছেন। তিনি কিয়ামতের ছোট এবং বড় আলামত উভয়েই বর্ণনা করেছেন।
কিয়ামতের ছোট আলামত কিছুটা প্রকাশিত হয়েছে, তবে বড় আলামত এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে বড় আলামত প্রকাশের আগে যেসব ছোট আলামত প্রকাশিত হবে, সেগুলোর কিছু এখনই দৃশ্যমান।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে: ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড়ের উন্মোচন, আরব ভূখণ্ডের সবুজ তৃণলতায় পূর্ণ হওয়া, এবং মদ্যপান, ব্যভিচার ও সুদের প্রচলন বৃদ্ধি।
মহানবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের অন্যতম আলামত হলেন তিনি নিজে, অর্থাৎ তাঁর পৃথিবীতে আগমনই ছিল কিয়ামতের প্রথম আলামত। আবু হুরায়রা (র.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) তার দুই আঙুল একসাথে করে বলেছিলেন, “যেমন এই আঙুল দুটি কাছাকাছি, আমাকেও কিয়ামতের ঠিক তেমন কাছাকাছি পাঠানো হয়েছে” [সহীহ বুখারী]। রাসুল (স.) ছিলেন শেষ নবী, তাঁর পর আর কোনো নবী আসবে না, তাই এটি প্রমাণ করে যে কিয়ামত তাঁর পরেই আসবে।
মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের আগে তুমি দেখবে, খালি পায়ের বেদুঈনরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করবে কে বড় ইমারত নির্মাণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম] ৭০-১০০ বছর আগের আরবরা ছিল অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত, কিন্তু আজ তারা বিশ্বের বৃহত্তম ও অত্যাধুনিক দালান নির্মাণ করছে, আর তারা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা।
এছাড়া, মহানবী (স.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে কিয়ামতের আগে মসজিদগুলো রাজপ্রাসাদের মতো হয়ে যাবে। যদিও তিনি মসজিদগুলো সাধারণ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আজকাল আমাদের আশপাশের মসজিদগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, মার্বেল পাথর, দামি কার্পেট, ঝাড়বাতি ইত্যাদি দিয়ে সেগুলো সাজানো হচ্ছে। তবে, এসব মসজিদে নামাজের সময় অনেক সময় খালি থাকে।
মহানবী (স.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের আগে হত্যা বৃদ্ধি পাবে। এতটাই বাড়বে যে, যে হত্যা করছে সে জানবে না কেন, এবং যে নিহত হচ্ছে, সে জানবে না কেন। আমাদের সমাজে এর চিত্র স্পষ্ট।
মহানবী (স.) বলেন, কিয়ামতের আগে সুদের ব্যবহারও বেড়ে যাবে। এতটাই বৃদ্ধি পাবে যে কেউ এর ধুলা থেকেও বের হতে পারবে না। আজকের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, যেখানে সুদের মাধ্যমে টাকা চলাচল করছে। অর্থাৎ, আমরা এখন সবাই সুদের জালে আবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, কিয়ামতের আগে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাবে, তবে মানুষের প্রকৃত জ্ঞান কমে যাবে। অর্থাৎ মানুষ পড়তে এবং লিখতে সক্ষম হবে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সেই সময় বক্তাদের সংখ্যা বেড়ে যাবে, তবে প্রকৃত জ্ঞানী মানুষের সংখ্যা কমে যাবে।
এছাড়া ছোট-বড় আরো অনেক আলামত রয়েছে যা মহানবী (স.) ১৪০০ বছর আগেই বলে গেছেন, এবং এখন আমরা সেগুলো বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। এসব আলামত দেখেই আমরা বুঝতে পারি যে কিয়ামত আমাদের নিকটে চলে এসেছে। এখন হয়ত শুধু বড় আলামতের প্রকাশ বাকি, যা যেকোনো সময় ঘটতে পারে। ইমাম মাহদীর আগমনের পর একে একে আসবে দাজ্জালের, ইসা (আ.), ইয়াজুজ-মাজুজ, ৩টি ভয়াবহ ভূমিকম্প, ধোঁয়া, আগ্নিকুন্ড, এক পশুর আগমণ এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়। এসব আলামত আসার আগেই আল্লাহ যেন আমাদের তওবা কবুল করে নেন।
Leave a Reply