ভারতীয় আবহাওয়া দফতর তাদের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। এই আয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। সরকারি খরচে অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণ এড়ানোর কথা বলা হলেও এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে আরও গভীর এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রেক্ষাপট।
ভারতের দিল্লি থেকে মাসখানেক আগে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতরকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি ভারতের মৌসম ভবনের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত‘অভিভক্ত ভারত’শীর্ষক আলোচনা সভার অংশ। এ আয়োজনকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, যেখানে পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ অংশগ্রহণের সম্মতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতরের কার্যনির্বাহী পরিচালক মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন,”আমরা দিল্লির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি এবং নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু সরকারি খরচে অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে।” তবে এই বক্তব্যের পেছনে আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
ভারত এই আয়োজনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের অবস্থানকে সুসংহত করতে চায়। স্মারক মুদ্রা প্রকাশ, বিশেষ ট্যাবলো প্রদর্শন এবং অন্যান্য প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারত নিজেদের ‘সহযোগী দেশ’হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তবে এই উদ্যোগের নেপথ্যে ভারতের আরও একটি উদ্দেশ্য স্পষ্ট প্রতিবেশী দেশগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের বার্তা দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে ভারতের নীতিতে দ্বিমুখীতা রয়েছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নদী এবং পানি নিয়ে ভারতের একতরফা নীতি সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের পানি নিয়ন্ত্রণ, বন্যার সময় হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্লাবন সৃষ্টি, এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রেখে বাংলাদেশের ফসলি জমির ক্ষতি করা এসব ঘটনা বাংলাদেশের জন্য পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। তিস্তা চুক্তি বা গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সব ক্ষেত্রেই ভারতের আচরণ ছিল একতরফা ও স্বার্থপর।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের আবহাওয়া দফতরের ১৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করছেন। এটি ভারতের আগ্রাসী নীতিকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণ নয়, বরং একটি নৈতিক এবং কূটনৈতিক বার্তা। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে, দেশের স্বার্থ যেখানে ক্ষুণ্ণ হয়, সেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নামে কোনো আপস করা হবে না। এটি শুধু ভারতের নীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং আত্মসম্মান এবং দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন।
Leave a Reply