হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধির হার ভুয়া, প্রশ্ন তোলেনি বিশ্ব!

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার আমলে দেখানো দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ভুয়া। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন না তোলার জন্য বিশ্বই দায়ী।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, “শেখ হাসিনা দাভোসে সবাইকে শেখাচ্ছিলেন কীভাবে একটি দেশ চালাতে হয়, কিন্তু কেউই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এটি মোটেও ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা নয়। তিনি দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অন্য সবার চেয়ে বেশি—কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।”

কেন তিনি এই প্রবৃদ্ধির হারকে ভুয়া বলে মনে করেন সে বিষয়ে রয়টার্সকে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. ইউনূস। তবে ব্যাপক-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব ও সম্পদের বৈষম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ১৭ কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছায়। করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার সময় এই হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির এক দেশ হিসাবে তকমা দিয়েছিল। ওই সময় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ২০১৫ সালে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

রয়টার্স বলেছে, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের অর্থনীতি ও বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। যদিও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে দমন করার অভিযোগ করেছেন।

ভারতে আশ্রয় ও বিচার দাবি
২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। তবে নয়াদিল্লি এখনো এই অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দৃঢ় বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন ড. ইউনূস। আন্দোলকারী ও রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং তার মেয়াদকালে যেসব অপরাধ করেছেন সেজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চান তিনি।

এই কঠিন সময়ে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেছেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে টানাপড়েনের সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্থল সীমানার প্রায় পুরোটাই ভারতের সাথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *