আবারও কি বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হবে আরাকান?

মিয়ানমারের বর্তমান আরাকান রাজ্য, এক সময় ঐতিহাসিকভাবে ছিল বাংলাদেশের অংশ। চট্টগ্রাম রাঙামাটিসহ পার্বত্য এলাকাগুলি ছিল এই আরাকানের অংশ। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মাত্র একটি ভুলের কারণে হাতছাড়া হয় প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই আরাকান।

যার মাটির নীচে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু কী ভুলের কারণে হাতছাড়া হয় এই আরাকান? বাংলাদেশ কি আবার দখল করবে আরাকান? কেনই বা বাংলাদেশের মানচিত্রে এই ভূখণ্ড যোগ করা হচ্ছে না? তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

২২,০০০ বর্গ মাইল আয়তনের আরাকান রাজ্যের বাংলার সঙ্গে ছিল গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ফলে আজকের এই অবস্থা। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কখনও এতটা পরাধীন ছিল না। তাদের ছিল স্বাধীন এক রাষ্ট্র রাখাইন। যার আদি নাম আরাকান।

সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন পার্শ্ববর্তী উপকূলে আশ্রয় নেন। আর তারা বলেন, আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। আর তাদের দাবি সেই রহম থেকেই রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব হয়।

পরবর্তী সময়ে চাটগাঁইয়া, রাখাইন, আরাকান, বার্মা, বাঙালি, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষের মিশ্রণে এই জাতি চতুর্দশ শতাব্দীতে পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আজকের নির্যাতিত আরাকান মুসলমানদের রয়েছে গৌরবময় অতীত ১৮২৪ সালে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বার্মা দখল করে। এরপর দীর্ঘ একশ বছর পর্যন্ত আরাকানীরা অনেকটাই স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু খনিজ সম্পদে কাল হয়ে দাঁড়ায়। আরাকান অঞ্চলের জন্য এখানে পেট্রোল কয়লা ও তেলসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। এমনকি সেখানে সোনা ও রুপার অস্তিত্ব থাকা একেকসময় দখলে নিয়েছে একেক দেশ ।কিন্তু ১৯৪২ সালে আরাকান জাপানের অধীনে চলে যায়। অবশেষে ১৯৪৫ সালে আবার ব্রিটিশরা দখল করে। এরপর ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ করার সময় রাখাইনে নেতারা জনাব ‍মুহম্মদ আলি জিন্নাকে খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার অনুরোধ করেন। কিন্তু জিন্নার উদাসীনতার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। জিন্না আরাকানের ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা গ্রহণ করলে আজ রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো।

ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে আরাকান মিয়ানমার থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল৷ কেননা ঐতিহাসিকভাবে আরাকান মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের অংশ ছিল না। আরাকান একসময় ছিল স্বাধীন ও বাংলার অংশ। অবশেষে ‍মুহম্মদ আলি জিন্নার অবহেলার কারণে বার্মিজরা আরাকান দখল নেয়। ব্রিটিশ উপনিবেশে ভারত পাকিস্তান স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ এর সঙ্গে একীভূত হতে চায়। আরাকান নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে ১৯৪৬ সালে আরাকান মুসলিম লীগ গঠন করে তারা। কিন্তু জিন্নার ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আরাকান বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। সুতরাং রাখাইন রাজ্য কখনই মিয়ানমারের অংশ ছিল না, তা ছিল বাংলাদেশের অংশ।

বাংলাদেশের মানচিত্রে আরাকান কি আবার যুক্ত হবে?

জুলাই ২০০০সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হলে রোহিঙ্গাদের ভূমি রাখাইনকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন এক কংগ্রেসের প্রতিনিধি। মার্কিন কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাব তোলেন কংগ্রেসের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ব্র্যাড শেরম্যান। কিন্তু বাংলাদেশের তখনকার সরকার বলেছিল,১,৪৭,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ নিয়ে আমরা খুশি। অন্যের জমি নিয়ে আসা এবং অন্য দেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *