গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতা দেশত্যাগ করেন। কেউ কেউ পালিয়ে যেতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন এবং আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
একসময়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা এখন কারাগারের চার দেয়ালে বন্দি। একসময় যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের জীবন এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাবেক সংসদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, যিনি একসময় দামি গাড়ি ব্যবহার করতেন, এখন দিন কাটাচ্ছেন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জলসিঁড়ি সেলে। সেখানে তার থাকার জন্য রয়েছে একটি আমগাছের কাঠের চৌকি, সঙ্গে একটি তোষক, কম্বল, বালিশ, মগ ও থালাবাটি। বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত আমুর সঙ্গী এখন একজন মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলেও আমু কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ৬ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন এবং এরপর থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই রয়েছেন।
অন্যদিকে, সাবেক এমপি সালমান এফ রহমান বর্তমানে রয়েছেন কারাগারের ফ্লোরে। ২৭ জানুয়ারি রিমান্ড শুনানির সময় তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি ফ্লোরে ঘুমান এবং তার সঙ্গে একজন বন্দি রয়েছেন। তিনি বলেন, রাতের খাবার বিকেল চারটায় দেওয়া হয়, যা রাতের মধ্যে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাকে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথাও বলতে দেওয়া হয় না। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তাকে সদরঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গেও তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা দুজনই কেরানীগঞ্জ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক সরকারের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন টিভি দেখে, বই পড়ে বা আড্ডা দিয়ে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা কারাগারের ক্যান্টিন থেকে টাকা দিয়ে ভালো খাবার কেনার সুযোগ পাচ্ছেন এবং সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেলে থাকার বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা করিডর ও ক্যান্টিনে সময় কাটানোর সুযোগ পান। তবে কারাগারে শুধুমাত্র বিটিভি দেখা যায়, অন্য কোনো বেসরকারি চ্যানেল দেখার অনুমতি নেই। এছাড়া তাদের জন্য একটি ইংরেজি ও তিনটি বাংলা পত্রিকা পড়ার সুযোগ রয়েছে।
সাধারণত গ্রেপ্তারের পর বন্দিদের সপ্তাহে একদিন পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হলেও নিরাপত্তার কারণে এই সুযোগ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ১৫ দিন পরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ আরও অনেকে। অন্যদিকে, কাসিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/TvkI1Hq2IyY?si=Y6shvYuYXvEVjj81
Leave a Reply