সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বাড়িঘরে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি না চালানোর নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি পরিপত্র জারি করেছে সরকার। যারা এই নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এমন পরিপত্র জারির পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা গেছে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেন অসুবিধা না হয়, সে জন্য গরমকালে স্যুট-কোট পরিধান করে অফিসে না আসার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় শিগগিরই নজরদারি শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা।
অফিস কিংবা বাড়িঘরে কেউ যদি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি চালান, তাহলে সরকার নজরদারি করে সেটা চিহ্নিত করবে কিভাবে?
এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এটা করা কঠিন কিছু হবে না, খুব সহজ।’
বাংলাদেশে শীতকালের তুলনায় গরমকালে সাধারণত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়।
এ বছর গ্রীষ্মে গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা করছে সরকার। কিন্তু চলমান আর্থিক ও জ্বালানি সংকটের মধ্যে চাহিদার পুরোটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কঠিন হবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সবাই সহযোগিতা করলে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
এতে রোজা ও গরমের সময় লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।’
নজরদারি করা হবে কিভাবে?
সরকারের পক্ষ থেকে এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না রাখার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে কিভাবে নজরদারি করা হবে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
এ ধরনের কাজে আদৌ নজরদারি করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মি. খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ যেহেতু একটা ফিডারের মাধ্যমে যায়, কাজেই সেই ফিডার পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে যে, কোথায় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।’
এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি শেনাক্ত করা হবে কিভাবে?
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কাছে তো আগের সব তথ্য রয়েছে।
আমরা তো জানি যে ফিডারে গতকাল কত ছিল, আজকে কত হলো। শীতকালে কত ছিল এবং গরমকালে এসে কত বাড়ল, সেই তথ্য দেখলে বিষয়টা বোঝা যাবে।’
বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্যে অসংগতি লক্ষ করা গেলে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি দেখা যায় যে জেনুইন বা যৌক্তিক কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু অকারণে অপচয় করা হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, সেখানে সরকারি কার্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতেও সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি অফিসগুলোতে প্রতিদিন মনিটর করা হবে। যদি কোনো অফিসে বিদ্যুৎ অপচয় করা হয়, তাহলে সেই অফিসের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’
যদিও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সেটা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির ক্ষেত্রে কী ঘটতে পারে, সে বিষয়ে অবশ্য পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘চিহ্নিত করার পর ওইসব লাইনেই আমরা লোডশেডিং দেব। ওইগুলোতেই আগে লোডশেডিং দেওয়ার পর অন্যান্য জায়গায় দেওয়া হবে।’
কিন্তু গ্রাহক যেখানে টাকা দিয়ে ক্রয় করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, সেখানে সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা একটা বিশেষ পরিস্থিতি। সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই আমরা সবাইকে সহযোগিতার করার অনুরোধ জানিয়েছি এবং এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা
Leave a Reply