free tracking

শাস্তির প্রক্রিয়া চলছে সম্পদের হিসাব না দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে!

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্যাডার কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীর সংখ্যা কমবেশি ৬৮ হাজার। শুধু ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যাই ছয় হাজার ৫৩৯। এর মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা সরকারি নির্দেশনা মেনে তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। তবে যারা সম্পদের হিসাব জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার সময় কয়েক দফা বাড়ানোর পর বর্ধিত সময় শেষ হয়েছে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১৬ দিন পার হলেও কতজন কর্মচারী সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন তার সুনির্দিস্ট তথ্য নেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়টির অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা অন্তত ৬৭ হাজার ৯৩১।

এর মধ্যে ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যা ছয় হাজার ৫৩৯।
মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৯৫১। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে দুই হাজার ১৯০ জন এবং বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি অফিসে ৫৩ হাজার ২৫১ জন। এই বিপুল জনবলের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সম্পদের হিসাব জমা দেবেন ক্যাডার কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অন্যরা নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার কথা। উল্লিখিত বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ বিভাগীয় কমিশনার অফিস, ডিসি অফিস ও দপ্তর-সংস্থায়ও অনেকেই তাদের সম্পদের হিসেব জমা দিয়েছেন। যারা সম্পদের হিসাব জমা দেননি তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।


ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্টাফ ও বিভিন্ন জেলা কার্যালয়ের কর্মচারীদের বেশির ভাগই তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন। আমরা তা সংরক্ষণ করছি। তবে এখন পর্যন্ত এর পরিমাণ কত তা বলতে পারব না। এই পরিসংখ্যান পেতে হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

প্রায় অভিন্ন কথা বলেছেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাডার কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নথি আমাদের কাছেই রয়েছে। এগুলোর পরিমাণও অনেক বেশি। এখনো সেগুলোর হিসাব-নিকাশ করা হয়নি। মনে হচ্ছে, সবাই হিসাব দিয়েছেন।’

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়গুলোর মতো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অবস্থাও। বেশির ভাগ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জানিয়েছেন, তাদের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন। কারা জমা দেননি তাদের বিষয়েও এখন খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে পঞ্চগড়ের ডিসি মো. সাবেত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ের প্রায় সব কর্মচারী তাদের সম্পদের হিসাব সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দিয়েছেন। আমরা সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তার পরও যদি কেউ না দিয়ে থাকেন তাহলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

শেরপুরের ডিসি অফিসের বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ডিসি তরফদার মাহমুদুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ স্টাফই সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। আমরা এখনো তা হিসাব করে দেখার সময় পাইনি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেউ সম্পদের হিসাব না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *