চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। বিশেষ করে টুর্নামেন্টের সূচি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এবার সেই বিতর্কে নিজের মতামত দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটার ডেভিড মিলার। তার মতে, আইসিসির সিদ্ধান্ত ‘অযৌক্তিক’ এবং এই সূচির কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্বল অবস্থায় পড়েছিল।
সূচির জটিলতা ও ভোগান্তিদক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে গ্রুপপর্বের ম্যাচ শেষ করেই দুবাইয়ে যেতে হয়, যাতে সম্ভাব্য সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ভারত যখন শেষ গ্রুপ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে আসে, তখন সূচি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়, আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে আবার পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে সেমিফাইনাল খেলতে হয়।
মিলারের অভিযোগএই জটিল যাতায়াতই দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালের প্রস্তুতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন মিলার। ম্যাচের পর তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“ফ্লাইট মাত্র এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ছিল, কিন্তু আমাদের এই যাত্রাটা করতে হওয়াটা আদর্শ পরিস্থিতি ছিল না। ম্যাচের পর ভোরবেলা আমাদের উড়াল দিতে হয়, বিকেল ৪টায় দুবাই পৌঁছাই, আর সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে আমাদের আবার পাকিস্তানে ফিরতে হয়। এটা মোটেও সুবিধাজনক ছিল না। যদি দীর্ঘ ফ্লাইট হতো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের সময় পাওয়া যেত, তাহলে কিছুটা সহনীয় হতো। তবে এভাবে যাতায়াত করা মোটেও আদর্শ ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “খেলোয়াড়দের জন্য এই ধরনের সূচি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগই দেওয়া হয়নি, যা সরাসরি আমাদের পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলেছে।”
সেমিফাইনালে মিলারের দুর্দান্ত ইনিংস, তবুও জয় আসেনিলাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালটি ছিল রোমাঞ্চকর। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কিউইরা ৫০ ওভারে ২৮৯ রান সংগ্রহ করে। জবাবে রান তাড়ায় নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা দারুণ চাপে পড়ে যায়। কিন্তু ডেভিড মিলার একাই লড়াই চালিয়ে যান। মাত্র ৬৭ বলে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন তিনি। তবে তার অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস দলকে জেতাতে যথেষ্ট হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৫০ রানে হেরে বিদায় নিতে হয় প্রোটিয়াদের।
ভারতের জন্য বিশেষ সুবিধা?টুর্নামেন্টের সূচি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে ভারতের ম্যাচগুলো নিয়ে। নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে ভারতকে পাকিস্তানে খেলতে যেতে হয়নি। তাদের সব ম্যাচই দুবাইয়ে আয়োজন করা হয়। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিল ক্রিকেটবিশ্বের অনেকে। মিলারের কথাতেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট, যদিও তিনি সরাসরি কিছু বলেননি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ভারত এখন ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ব্ল্যাক ক্যাপসরাই। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে এবার নতুন কোনো বিতর্ক তৈরি হয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
আইসিসির নীরবতা ও ভবিষ্যৎ বিতর্কএমন গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের সূচি নিয়ে এত প্রশ্ন উঠলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি আইসিসি। তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের সূচি নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে, যাতে কোনো দলকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়া না হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃখজনক বিদায়ের পর এখন সব আলোচনার কেন্দ্রে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ফাইনাল। তবে তার আগেই মিলারের বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা আইসিসিকে ভবিষ্যতে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে।
Leave a Reply