এখন বৈশাখ মাস। শুরু হয়ে গিয়েছে বজ্রপাত ও বৃষ্টি। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার একটা অন্যতম কারণ যেমন বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য, তেমনই আর একট কারণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা তত বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৯ জেলায় বজ্রপাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লার দুই উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের দুই উপজেলায় তিনজন, যশোর, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও চাঁদপুর, খুলনা ও শরীয়তপুরে একজন করে মারা যান।
কেন বজ্রপাত হয়
বাংলাদেশের দক্ষিণ থেকে আসা গরম আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে সৃষ্ট অস্থিতিশীল আবহাওয়ায় তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে হয় বজ্রপাত। এ সময় উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায় তাতেই আঘাত করে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ ভৌগলিক অবস্থান। একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে আসছে গরম আর আর্দ্র বাতাস। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। কিছু দূরেই হিমালয় পর্বত। যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসে। এই দুই জায়গা থেকে আসা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। গবেষকরা বলছেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলাও তার একটি কারণ। উঁচু গাছপালা বজ্রনিরোধক হিসেবেও কাজ করে। খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে অসচেতনতাও বজ্রপাতে প্রাণহানি বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
কোন সময় বজ্রপাত বেশি হয়
পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ৮০ লাখ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়। ২০১৯–২০ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাত হয়েছে ৩১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ দুর্যোগ হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬ শতাংশ হয় মে মাসে। ঋতুভিত্তিক বিন্যাসেও বজ্রপাতের ধরনে পার্থক্য রয়েছে। মার্চ থেকে মে মাসে প্রায় ৫৯ শতাংশ, আর মৌসুমি বায়ু আসার সময়, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ বজ্রপাত হয়। তবে মোট বজ্রপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে।
বজ্রপাতের সময় করণীয়
বজ্রপাত একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বজ্রপাতে শরীরে বৈদ্যুতিক শক হয়। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় হার্ট এবং ব্রেইন। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং অনেকেই অবশ হয়ে যেতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হয়ে যেতে পারে প্যারালাইজড। যারা মারা যান, তার চেয়ে কয়েকগুণ জটিলতায় ভোগেনে বেঁচে যাওয়ারা।
কেউ যখন বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তাকে বাঁচানোর জন্য প্রাথমিক কিছু বিষয় করা যেতে পারে। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাকে সিপিআর চালিয়ে রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
বজ্রপাত প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় কী করা যাবে আর যাবে না তা গুরুত্বপূর্ণ। মাঠে-ঘাটে, নদীতে-পানিতে, বাইরে যারা কাজ করেন, বিশেষ করে যারা গ্রামে কৃষিকাজ করেন, তারা বজ্রপাতে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে। মাটির সঙ্গে যেন স্পর্শ কম হয়, এমনভাবে বসে থাকা। দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরতে হবে। তবে গাছের নিচে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। ঘরের ভেতরে অবস্থান করলে, দরজা-জানালার পাশে না দাঁড়ানো ভালো। যদি কেউ পানিতে থাকে, তাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি পানি থেকে উঠে আসতে হবে।
Leave a Reply