free tracking

জমির যেসব বিষয়ে মামলা লুকিয়ে থাকে, কেনার আগে অবশ্যই যে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করতে হবে!

বাংলাদেশে জমি কেনা যেন এক ধরনের ‘সতর্কতার খেলা’। দলিল ঠিক, দখল ঠিক—তারপরও দেখা যায়, জমিটির ওপর পূর্বের কোনো মামলা বা বিরোধ ঝুলে আছে। ফলে অনেকেই জমি কিনে পড়েন চরম জটিলতায়। জমির মালিকানা স্পষ্ট না হলে কিংবা কাগজপত্র যাচাই না করলে লাখ টাকার বিনিয়োগও এক মুহূর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে।

এ ধরনের প্রতারণা ও ঝামেলা থেকে বাঁচতে জমি কেনার আগে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই খুঁটিয়ে যাচাই করে নেওয়া জরুরি:

১. জমির তফসিল যাচাই

প্রথমেই জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর এবং উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ জানা দরকার। এটি জমির অবস্থান ও সীমারেখা সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

২. কাগজপত্র সংগ্রহ

বিক্রেতার কাছ থেকে জমির সকল কাগজপত্রের ফটোকপি নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:

সি.এস, এস.এ, আর.এস ও বি.এস/ঢাকা সিটি জরিপের খতিয়ান

বায়া দলিল বা চেইন অব টাইটেল

নামজারি খতিয়ান

হাল সনের খাজনার রসিদ

৩. মালিকানা যাচাই

বিক্রেতা যদি ক্রয়সূত্রে মালিক হন, তবে ক্রয় দলিল যাচাই করতে হবে। আর উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হলে, সর্বশেষ জরিপে তার নাম থাকা জরুরি।

৪. ফরায়েজ বা বণ্টননামা

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমি হলে অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে সম্পত্তি ভাগাভাগির কাগজ (ফরায়েজ) দেখা আবশ্যক। বণ্টন চূড়ান্ত না হলে ঝুঁকি থেকে যায়।

৫. মামলা ও দায়বদ্ধতা

জমিটি নিয়ে কোনো মামলা বিচারাধীন কিনা, পূর্বে কোনো মামলা হয়েছে কিনা বা জমিটি ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রাখা আছে কিনা তা অবশ্যই খোঁজ নিতে হবে।

৬. খাস বা সরকার অধিগ্রহণকৃত জমি কিনা

জমি সরকারি খাস, পরিত্যক্ত, শত্রু সম্পত্তি অথবা অধিগ্রহণকৃত কিনা তা উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের এল.এ. শাখা থেকে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

৭. বিক্রেতা নাবালক বা মানসিকভাবে অক্ষম কিনা

নাবালক বা মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির বিক্রয় আইনগতভাবে বৈধ নয়। আদালতের অনুমোদন ছাড়া এদের কাছ থেকে জমি কিনলে পরে বড় বিপদ হতে পারে।

৮. নামজারি ও খাজনা যাচাই

জমির সর্বশেষ নামজারি ও ডিসিআর খাজনা রসিদ যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে জমি বৈধভাবে মালিকানায় আছে কিনা।

৯. নকশা ও দাগ মিলিয়ে সরেজমিন যাচাই

সি.এস/আর.এস/বি.এস/সিটি জরিপের নকশা নিয়ে সরেজমিনে জমি যাচাই করা উচিত। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমির লেনদেন ইতিহাস তল্লাশি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

১০. ভোগদখল ও পথাধিকারের বাধা

বর্তমানে জমিটি কার দখলে আছে, রাস্তা বা পথাধিকারের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা মাঠপর্যায়ে যাচাই করা আবশ্যক।

উপসংহার

জমি কেনার আগে শুধু কাগজপত্রে ভরসা করলেই চলবে না। আইনি ও বাস্তব সব দিক থেকে যাচাই-বাছাই করতে না পারলে পরে আপনাকেই গুনতে হতে পারে লাখ টাকার ক্ষতি। তাই জমি কেনার প্রতিটি ধাপেই হতে হবে সচেতন, নিরপেক্ষ ও সাবধানী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *