আইপিএলের শিরোপা জয়ের পর বেঙ্গালুরুতে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) বিজয় উদযাপনে পদদলনে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে। এ ঘটনার জেরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক ও ক্রিকেট সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গত বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আরসিবির বিজয় উদযাপনের সময় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ঘটে যাওয়া পদদলনের ঘটনার প্রেক্ষিতে এক সামাজিক কর্মী, এইচএম ভেঙ্কটেশ বিরাট কোহলির বিরুদ্ধে দায় চাপিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও এখনো কোনো এফআইআর দায়ের হয়নি বলে পিটিআই সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় #ArrestKohli হ্যাশট্যাগটি ব্যাপকভাবে ট্রেন্ড করে। বহু ব্যবহারকারী কোহলির লন্ডন সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার ‘মানবিকতার অভাব’ নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
তাদের ভাষ্য, ‘নিজেদের ভক্তদের সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার ন্যূনতম মানবিকতা দেখাননি কোহলি।’ কেউ কেউ তুলনা টানেন অভিনেতা আল্লু অর্জুনের সঙ্গে, যাকে গত ডিসেম্বরে হায়দরাবাদের একটি থিয়েটারে পদদলনের ঘটনার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তার রাজনৈতিক সচিব কে. গোবিন্দরাজুকে বরখাস্ত করেছেন। যদিও সরকারিভাবে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি, বিভিন্ন সূত্রের দাবি, স্টেডিয়ামের আগে বিধানসৌধে আরসিবির সংবর্ধনার প্রস্তাব দেন গোবিন্দরাজুই।
যদিও গোবিন্দরাজু নিজে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, ‘আমি ক্রীড়ামন্ত্রী নই, ক্রিকেট নিয়ে কোনো পরামর্শ দিইনি।’
ঘটনার জেরে আরসিবির বিপণন প্রধান নিখিল সোসালেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কেএসসিএর সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশি গ্রেপ্তারি অভিযান চালানো হয়েছে। তবে হাইকোর্ট ওই তিন কর্মকর্তাকে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের হাত থেকে রেহাই দিয়েছেন।
এছাড়া আরসিবি এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ডিএনএর আরও তিন শীর্ষ কর্মকর্তা- সুনীল ম্যাথিউ (পরিচালক ও সহসভাপতি), সুমন্ত (টিকিট ব্যবস্থাপক) এবং কিরণ কুমার (ম্যানেজার)- বেঙ্গালুরু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় শুক্রবার সকালে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন।
ঘটনার জন্য সরাসরি দায় চাপানো হয়েছে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের ওপর। বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পি. রাজীব মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি. পরমেশ্বরার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রাজীব বলেন, ‘মানবিক প্রাণহানির মূল দায় সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমারের। তারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে গিয়ে এই উদযাপনের ব্যবস্থা করেন। পরমেশ্বরার অবহেলাও এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী।’
নতুন পুলিশ কমিশনার সিমান্ত কুমার সিং দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নতুন একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে আরসিবি, ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট এবং কেএসসিএর বিরুদ্ধে, এক পদদলিত হওয়া ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে।
ঘটনার জেরে শুধু রাজনীতি নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘কান্না আসে যখন আইপিএল জয় হয়, কিন্তু যখন ভক্তরা প্রাণ হারায়, তখন আপনার চোখে জল নেই? আপনি আমাদের শ্রদ্ধা হারিয়েছেন বিরাট কোহলি। এই নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া যায় না।’
বর্তমানে বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং সবার নজর তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দিকে। সরকার ও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না। তবে বিরাট কোহলির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
Leave a Reply