কোরবানির ঈদ মানেই ত্যাগের মহিমা, আত্মার পরিশুদ্ধি আর নানান মাংসের লোভনীয় পদে ভরপুর এক উৎসব। বছরের এই বিশেষ দিনে দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই বিরাজ করে গরু বা খাসির মাংসের সুবাস। কাবাব, রেজালা, কোর্মা থেকে শুরু করে ভুনা পর্যন্ত নানা রকম রান্নায় জমে ওঠে উৎসবের আয়োজনে।
তবে উৎসবের এই আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে অনেকেই অজান্তেই অতিরিক্ত পরিমাণে মাংস খেয়ে ফেলেন। চিকিৎসকদের মতে, এতে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের সমস্যা, বিশেষ করে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস কিংবা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য এটি হতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঈদের আনন্দে গোস্ত খাওয়া যাবে—তবে অবশ্যই সীমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে।
১. হজমের সমস্যা: অতিরিক্ত মাংস, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত মাংস হজম হতে অনেক সময় নেয়। এতে পেট ব্যথা, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এমনকি ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের পিত্তথলিতে সমস্যা থাকলে হজমে আরও বেশি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি: কোরবানির মাংসে, বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংসে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে এই ধরনের ফ্যাট গ্রহণ করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বেড়ে যায়, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
৩. রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি: অতিরিক্ত মাংস খেলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এতে জয়েন্টে ব্যথা, বিশেষ করে গেঁটে বাত বা গাউটের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্যও এটি মারাত্মক হতে পারে।
৪. ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা: মাংসে প্রচুর ক্যালরি থাকে। উৎসবের মৌসুমে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাংস খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হয়, যা ওজন বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতার কারণ হতে পারে। স্থূলতা আবার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. কিডনির উপর চাপ: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনির উপর চাপ বাড়ে। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
যেভাবে ঈদের মাংস উপভোগ করবেন—
পরিমিত পরিমাণে খান: একবারে অনেক মাংস না খেয়ে, ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সারা দিনে খান। প্রতিটি খাবারে মাংসের পরিমাণ সীমিত রাখুন।
চর্বি বাদ দিন: মাংস রান্নার আগে দৃশ্যমান চর্বিগুলো কেটে বাদ দিন। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কমে আসবে। চামড়াসহ মাংস পরিহার করুন।
রান্নার পদ্ধতি: ভাজা বা অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভুনা না করে গ্রিল, বারবিকিউ, সেদ্ধ বা কম তেলে মাংস রান্না করুন। এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেকটাই কমবে।
আঁশযুক্ত খাবার ও সবজি: মাংসের সাথে প্রচুর পরিমাণে সালাদ, সবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খান। এটি হজমে সাহায্য করবে এবং পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখবে।
পর্যাপ্ত পানি পান: মাংস খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি হজমে সাহায্য করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবে।
হাঁটাচলা: ঈদের দিনে অলসতা না করে হালকা হাঁটাচলা করুন। এতে হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকবে।
আদা ও লেবুর ব্যবহার: মাংস রান্নায় আদা ব্যবহার করুন, কারণ আদা হজমে সাহায্য করে। খাওয়ার পর লেবু পানি পান করতে পারেন, যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
লবণ পরিমিত ব্যবহার: উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে খাবারে লবণের ব্যবহার কমিয়ে দিন।
ঈদ আনন্দের, তবে সেই আনন্দ যেন স্বাস্থ্যের জন্য বোঝা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। পরিমিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস খেয়ে ঈদ উদযাপন করুন সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
Leave a Reply