জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়ার ইতিহাস বহু পুরনো। স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও এই দ্বীপে এখনো কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এখনো অবহেলিত এই দ্বীপের মানুষ। গত ১৭ বছরে এই দ্বীপের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের চোখে পড়েনি।
আমি সবাইকে নিয়ে এই দ্বীপের উন্নয়নকাজে শরিক হতে চাই। হাতিয়ার উন্নয়নের কথা বললেই এক শ্রেণির মানুষের গায়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়।’
শনিবার (১৪ জুন) ভূমিহীন পরিবারের আয়োজনে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ হলরুমে ‘ভূমিহীন পরিবারের জীবনে নতুন ভোর, একটি স্বপ্নের যাত্রা, সম্মান ও স্বীকৃতির উৎসব’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আমরা যদি হাতিয়াতে ফেরির ব্যবস্থা করতে চাই তাহলে স্পিডবোট, ট্রলার মালিকদের গায়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যাবে।
কারণ তাদের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়বে। আমরা যদি ভূমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দিতে চাই, আমরা যদি গরিব-দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে ভূমিদস্যুদের গায়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যাবে। আমরা যদি হাতিয়ার সড়ক, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামগত উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করি তাহলে যারা অপরাজনীতি করছে তাদের অপরাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। সব দিক বিবেচনা করেই আমরা এখানে এসেছি।
আমরা মনে করি, একটা লড়াই প্রয়োজন। হাতিয়ার মাটি ও মানুষের স্বার্থে সেই লড়াইটা আমাকে-আপনাকে সবাইকে মিলেই করতে হবে। আমরা মনে করি, একটা দীর্ঘ সংগ্রাম প্রয়োজন, যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হাতিয়াতে একটিও ভূমিহীন পরিবার থাকবে না।’
ভূমিহীনদের যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক নেতারা লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে উল্লেখ করে হান্নান মাসউদ বলেন, ‘এই মানুষগুলোর কথা মিডিয়ায় আসে না, সুশীল সমাজের চোখে ভাসে না, সাংবাদিকদের দৃষ্টিতে আসে না। অসহায় এসব মানুষের কী অবস্থা, সেটি দেখার মতো কোনো লোক নেই।
’
হাতিয়ার নদীভাঙনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘হাতিয়ায় নদীভাঙন রোধে গত ৫০ বছরে কেউ একটি জিও ব্যাগও ফেলতে পারেনি, আমি গত ১০ মাসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সমন্বয় করে হাতিয়ার প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেশি জায়গায় ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ সম্পন্ন করেছি। আপনারা যদি আমার সাথে থাকেন, সঙ্গ দেন তাহলে হাতিয়াতে স্থায়ী ব্লক বাঁধ দেওয়া হবে। ৫ আগস্টের পর দৌড়াদৌড়ি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে আমি আমার হাতিয়ার নদীভাঙনের কথা তাকে বলেছি।’
হাতিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ভূমিহীন পরিবারের সদস্য শরিফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সময় হাতিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ফিরোজ উদ্দিন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক ইউসুফ, হাতিয়া নিউমার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদেরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবদুল হান্নান মাসুদকে ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধি দেন আয়োজকরা।
Leave a Reply