free tracking

যে কারনে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ালেন আইনজীবী!

নিরপেক্ষতা-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ‘রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর’ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আমিনুল গনি (টিটু)। পরে ঢাকা জজ কোর্টের এই আইনজীবীর জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আমির হোসেনকে।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এই আদেশ দেন।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সেদিনই ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

এর কিছুদিন পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ফোনালাপ বা কথোপকথনের কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে থাকে। গত বছর অক্টোবরে গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ মো. নেতা শাকিল আলম বুলবুলের সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’

ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল ফোনালাপটি ট্রাইব্যুনালের নজরে আনে প্রসিকিউশন।

শুনানির পর শেখ হাসিনা ও শাকিল আলমের কাছে ব্যাখ্যা চান ট্রাইব্যুনাল। জানতে চাওয়া হয়, এই ফোনালাপের কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না?গত ১৫ মে শুনানির তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে তাদের ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়। ব্যাখ্যা না পাওয়ায় সেদিন ট্রাইব্যুনাল তাদের ২৫ মে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা হাজির হননি।

এরপর ট্রাইব্যুনাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দিলে পরদিন দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ট্রাইব্যুনালের আদেশ তুলে ধরে তাদের ৩ জুন সকাল ১০টায় হাজির হতে বলা হয়। সেদিনও তারা ট্রাইব্যুনালে আসেননি। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৯ জুন এ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে এবং শেখ হাসিনা ও বুলবুলের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল) হিসেবে আমিনুল গনি টিটুকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই নিয়োগের পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিচার, ফাঁসি দাবি করে আমিনুল গনি টিটুর দেওয়া পোস্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

অনেক সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। প্রশ্ন তোলা হয়, যে আইনজীবী শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়েছেন, তিনি কিভাবে আদালতে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াবেন?

পেশাদারি, নৈতিকতা-নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বুধবার ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও বুলবুলের পক্ষে শুনানি করতে দাঁড়ান আইনজীবী টিটু। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা কিছু অ্যাডভান্স তথ্য পেয়েছি। আপনি এই ক্লায়েন্ট (শেখ হাসিনা) সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। আপনি বলেছেন, শেখ হাসিনার ফাঁসি চান। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরপর আর তাঁকে (শেখ হাসিনা) রিপ্রেজেন্ট (প্রতিনিধিত্ব) করতে পারেন না। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন।’

তখন আইনজীবী গনি টিটু বলেন, ‘স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আমার মক্কেলের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। সে জন্য আমি প্রস্তুতিও নিয়ে এসেছি। আমার ৩৬ বছরের পেশাগত জীবনে অসততা নেই।’

শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করা পোস্ট নিয়ে ট্রাইব্যুনালের জিজ্ঞাসায় আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। পেশাদারির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি তার পেশাদারির সততা, নৈতিকতা প্রমাণ করতে চান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপনি এমনটা করতে পারেন না।’ এরপর আমিনুল গনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল অ্যামিকাস কিউরি এ ওয়াই মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *