তারিখটা ৮ জুলাই। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের জন্ম হলেও, ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ে এই দিনটি হয়ে আছে চরম বেদনার প্রতীক। আজ থেকে ঠিক ১১ বছর আগে, ২০১৪ সালের এই দিনে, নিজভূমে স্বপ্নভঙ্গের সবচেয়ে নির্মম চিত্রনাট্যটা উপহার পেয়েছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পরাজয়—যা শুধু এক ম্যাচ নয়, বরং ছিল এক জাতির আত্মার ওপর দাঁপিয়ে যাওয়া শোকতরঙ্গ।
বেলো হরিজন্তের মিনেইরাও স্টেডিয়ামে সেদিন গ্যালারিতে ছিল ৫৮ হাজার দর্শক। মাঠে খেলছিল স্বাগতিক ব্রাজিল, সামনে ছিল জার্মানি। তবে ৯০ মিনিটে যা হলো, তা কল্পনাকেও হার মানায়। মাত্র ২৯ মিনিটে স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ৫-০! থমাস মুলারের গোলে শুরু, এরপর ক্লোসার বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া, খেদিরা ও ক্রুসের জোড়া আঘাত। দ্বিতীয়ার্ধে শার্লের দুই গোল, আর একমাত্র ব্রাজিলিয়ান গোল আসে অস্কারের কাছ থেকে—যা ছিল শুধুই সান্ত্বনার ছায়া।
কিন্তু ওই এক গোলও ম্লান হয়ে যায় কান্নাভেজা চোখের সামনে। গ্যালারিতে তখন শুধু স্তব্ধতা, অস্ফুট আর্তনাদ। ক্যামেরায় ধরা পড়ে ডেভিড লুইজের অবাক চোখ, দর্শকদের ঝরঝরে অশ্রু। দেশজুড়ে নেমে আসে এক মানসিক বিপর্যয়। এই ম্যাচের নামকরণ হয় “মিনেইরাও ট্র্যাজেডি”—ঠিক যেমন ১৯৫০ সালে উরুগুয়ের কাছে মারাকানার হার ছিল “Maracanazo”।
এই হার ছিল ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ‘কালো অধ্যায়’। নেইমারের ইনজুরি, থিয়াগো সিলভার নিষেধাজ্ঞা, স্কলারির কোনো কার্যকর পরিকল্পনার অভাব—সব মিলিয়ে ধসে পড়ে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের গৌরব। এরপর বহু চেষ্টা, তিতের নেতৃত্বে সাময়িক সাফল্য এলেও ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে ফের হতাশা। মিনেইরাওয়ের ৭-১ তবুও রয়ে গেছে তাজা ক্ষত হিসেবে।
তবে ফুটবল তো হারের মধ্যেও পুনর্জন্ম খোঁজে। এখন ব্রাজিলের পতাকা উঠেছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো, এনদ্রিকদের হাতে। নতুন প্রজন্ম আবারও স্বপ্ন দেখাতে চায়, গর্ব ফিরিয়ে আনতে চায় সেলেসাও-সমর্থকদের।
তবুও, ৮ জুলাই মানেই কান্না, মানেই এক দগদগে দিন। একটা ম্যাচ কিভাবে একটি জাতির আত্মপরিচয় নাড়িয়ে দিতে পারে, তা বোঝায় এই ৭-১ হার। আর তাই, ৮ জুলাইয়ের মিনেইরাও আজও শুধু ইতিহাস নয়—এটা এক রক্তমাখা স্মৃতির দিন।
Leave a Reply