বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে ইতিহাস গড়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও পা বাড়ালেন না উইয়ান মুল্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অধিনায়ক ট্রিপল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৪০০ রানের কাছাকাছি, যেখানে ব্রায়ান লারার ২০০৪ সালের ঐতিহাসিক ৪০০* রানের রেকর্ড আর মাত্র কয়েক ধাপ দূরে! কিন্তু ঠিক তখনই এক অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত—নিজেই ইনিংস ঘোষণা করলেন! প্রশ্ন উঠল, কেন?
ম্যাচশেষে এই প্রশ্নের জবাবে মুল্ডারের জবাব মন ছুঁয়ে যাবে সবার। বললেন, “লারা একজন কিংবদন্তি। তার মতো একজন ক্রিকেটারের নামের পাশে এই রেকর্ড থাকাটাই উচিত। আমার যদি আবারও এমন সুযোগ আসে, একই কাজ করব।” মুল্ডারের এই বক্তব্য অনেকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ১৯৯৮ সালের ঘটনা, যখন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মার্ক টেলর ৩৩৪ রানে অপরাজিত থেকেও ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন—ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড অক্ষুন্ন রাখতে।
তবে শুধু আবেগ নয়, ক্রিকেটীয় বাস্তবতাও কাজ করেছে মুল্ডারের সিদ্ধান্তে। জানান, “আমি মনে করেছি আমাদের স্কোর যথেষ্ট, এখন প্রতিপক্ষকে আউট করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কোচ শুকরি কনরাডকেও বলেছি, সেও একমত হয়েছে। লারার মতো কিংবদন্তির রেকর্ডটা থাকা উচিত।”
যদিও লারার রেকর্ডকে সম্মান জানাতে গিয়ে নিজের নামের পাশে যুক্ত করেছেন অসংখ্য রেকর্ড। হাশিম আমলার ৩১১ রানের ইনিংসকে টপকে তিনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরার। বিদেশের মাটিতে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডও এখন তার দখলে—ভেঙেছেন হানিফ মোহাম্মদের ৩৩৭ রানের ৬৬ বছরের পুরনো রেকর্ড।
অভিষেক ম্যাচেই অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বড় ইনিংস খেলার রেকর্ডটাও এখন মুল্ডারের। আগের রেকর্ড ছিল ২৭৭ রান, যা তিনিই ছাড়িয়ে গেছেন অনায়াসে। আরও চমকপ্রদ ব্যাপার, আগের দিন নো-বলে আউট না হওয়াটাই নাকি বদলে দিয়েছে তার মানসিকতা। ব্যাটিংয়ের সময় গুনগুন করে গেয়েছেন ক্র্যানবেরির বিখ্যাত গান “জোম্বি”—যেন নিজেকেই অনুপ্রাণিত করছিলেন!
বিশ্ব ক্রিকেটে এমন কীর্তি যেমন বিরল, তেমনই বিরল মুল্ডারের মতো আত্মত্যাগ ও শ্রদ্ধার উদাহরণও। ইতিহাসের খুব কাছ থেকে ফিরে গেলেও—ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।
Leave a Reply