বিশ্ব পোশাক শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কোভিড-পশ্চাৎকালীন ধাক্কা, যুদ্ধাবস্থা, আর্থিক চাপ—সবকিছুর মধ্যেও ২০২৪ সালে এই খাতটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৭.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.০৮ শতাংশ বেশি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর তথ্য বলছে, বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু সবাই একই গতিতে ছুটছে না।
বাংলাদেশ দ্বিতীয়, কিন্তু গতির অভাব চিন্তার কারণ
বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক, যা নিঃসন্দেহে গর্বের। তবে এক ধরণের অস্বস্তিও কাজ করছে—২০২৪ সালে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.২১%।
এর মানে হচ্ছে, আমরা জায়গা ধরে রাখলেও, এগোতে পারছি না। অন্যদিকে চীন শীর্ষে থেকে সামান্য (০.৩০%) বাড়িয়েছে, কিন্তু ভিয়েতনাম যেন ছুটছে দৌড়ে—৯.৩৪% প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে তারা।
ভিয়েতনাম থেকে আমরা কী শিখব?
ভিয়েতনামের এমন দৃষ্টান্তমূলক প্রবৃদ্ধি আমাদের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। তারা প্রযুক্তি, দক্ষ শ্রমশক্তি, এবং নতুন বাজার ধরতে কাজ করছে জোরেশোরে।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্প এখন আর শুধু শ্রমনির্ভর নয়, উদ্ভাবন, দক্ষতা, ও টেকসই উৎপাদন—এই তিনটিই ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।
পরিবর্তনশীল বাজার, বদলাতে হবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও
বিশ্বব্যাপী সোর্সিংয়ের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে। অনেকে আবার নিজের দেশেই উৎপাদনে ফিরছে (reshoring)। নতুন নতুন দেশ উঠে আসছে প্রতিযোগিতায়। তাই এখন শুধু আগের বাজারে টিকে থাকলেই চলবে না, নতুন বাজার খুঁজতে হবে।
BGMEA’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল স্পষ্টভাবেই বলছেন— “শুধু পরিমাণে বড় হওয়া নয়, মানে বড় হতে হবে। আমাদের ইনোভেশন, প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন—এসব নিয়ে ভাবতে হবে এখনই।”
তিনি আরও বলেন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হতে পারে আমাদের নতুন বাজার।
সংখ্যার গল্প
- বিশ্ব বাজার: $৫৫৭.৫০ বিলিয়ন (৭.০৮% প্রবৃদ্ধি)
- চীন: $১৬৫.২৪ বিলিয়ন (২৯.৬৪% মার্কেট শেয়ার)
- বাংলাদেশ: $৩৮.৪৮ বিলিয়ন (৬.৯০%)
- ভিয়েতনাম: $৩৩.৯৪ বিলিয়ন (৬.০৯%)
- ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা—সবার অবস্থান প্রায় একই, তবে গতি কারও বেশি, কারও কম।
বাংলাদেশের পোশাক খাত দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার, নতুন করে গড়ার।
আগামীতে যেসব দেশ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, দক্ষতা বাড়াতে পারবে, আর টেকসই উৎপাদনকে গুরুত্ব দেবে, তারাই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে।
তথ্যসূত্রঃ https://thefinancialexpress.com.bd/
Leave a Reply