free tracking

ডায়াবেটিস কমাতে মাসের পর মাস ওষুধ? ভুলে যান! ঘরে বানান এই ৫ পানীয়! (রেসিপিসহ)

স্বাস্থ্য সচেতনতায় সবকিছুই যে ওষুধের বোতল থেকে আসতে হবে—তা কিন্তু নয়। অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাওয়া-দাওয়া কিংবা পান করা কিছু সাধারণ পানীয়ই নিঃশব্দে শরীরের জন্য বড় ভূমিকা রাখে। যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য কিছু ঘরোয়া পানীয় হতে পারে সহজ, প্রাকৃতিক উপায়।

হ্যাঁ, এগুলো কোনো জাদুকরী সমাধান নয়, ওষুধের বিকল্পও নয়; তবে নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরকে একটু হলেও সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারে।

জেনে নিন এমন ৫টি পানীয়, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, অনেকের মুখে মুখে গল্প হয়েছে, আর এখন কিছুটা আধুনিক গবেষণাতেও গুরুত্ব পেয়েছে—

১. মেথি দানার পানি

রাতে মেথি দানা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করার অভ্যাস বহুদিনের। ধারণা করা হয়, মেথি দানা শরীরে শর্করার শোষণ কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়াতে পারে। মেথি দানায় ত্বক ও চুলের যত্ন, প্রদাহ কমানো ও মাসিক সংক্রান্ত অস্বস্তি কমাতেও উপকার হতে পারে।

যেভাবে তৈরি করবেন:
রাতে ১ চা চামচ মেথি দানা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে সেই পানি ছেঁকে পান করুন।
(মেথি দানাগুলো চিবিয়ে খেতে হবে না; শুধু পানি পান করলেই যথেষ্ট।)

২. গরম দারুচিনি পানি

মিষ্টি স্বাদের দারুচিনি শুধু রান্নার জন্য নয়, হজমেও উপকারী বলে মনে করা হয়। এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও দারুচিনির ভূমিকা থাকতে পারে। ছোট পরিমাণে নিয়মিত ব্যবহার করলে ইনসুলিনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া উন্নত হতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।

যেভাবে তৈরি করবেন:
হাফ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো বা ছোট একটা দারুচিনি স্টিক এক কাপ ফুটন্ত পানিতে দিন। কয়েক মিনিট ফুটিয়ে রাখুন। হালকা ঠান্ডা হলে সকালে বা খাওয়ার পর পান করুন।

৩. করলা (তিতা করলা) রস

তিতা করলার স্বাদ সবাই পছন্দ করে না, তবে এই তিতা স্বাদেই লুকিয়ে আছে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের শক্তি। করলায় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান থাকে, যা ইনসুলিনের মতো কাজ করে—শরীরের কোষে গ্লুকোজ প্রবেশে সাহায্য করে।

যেভাবে তৈরি করবেন:
একটি মাঝারি আকারের করলা ধুয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, বীজ ফেলে দিন। তারপর সামান্য পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। ছেঁকে নিন। স্বাদ সহজ করতে লেবুর রস বা শসা মেশাতে পারেন। সকালে নাশতার আগে অল্প পরিমাণে পান করুন। সপ্তাহে ১-২ বার খাওয়া যেতে পারে।

৪. আমলকি পানি

আমলকি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এবং বহুদিন ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ধারণা করা হয়, আমলকি অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে এবং খাওয়ার পর রক্তে শর্করার আচমকা বাড়া কমাতে পারে। ত্বক ও হজমেও ভালো কাজ করে।

যেভাবে তৈরি করবেন:
কাঁচা আমলকি গ্রেট করে বা চেপে রস বের করুন, অথবা বাজার থেকে খাঁটি আমলকি রস কিনুন। ১ টেবিল চামচ আমলকি রস এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে বা দুপুরে পান করুন। চাইলে সামান্য বিট লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন।

৫. অ্যালোভেরা ও তুলসী পানীয়

অ্যালোভেরার নাম শুনলেই সবার আগে ত্বকের যত্নের কথা মনে আসে। তবে অল্প পরিমাণে অ্যালোভেরা শরীরের ভিতরেও উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে পেটের স্বস্তি ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে। তুলসী যোগ হলে আরও বাড়তি সুবিধা মেলে—স্ট্রেস কমানো থেকে শুরু করে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখা পর্যন্ত।

যেভাবে তৈরি করবেন:
এক টেবিল চামচ তাজা অ্যালোভেরা জেল (পাতা থেকে সংগ্রহ করুন, বাজারের সুগন্ধিযুক্ত বা প্রসেসড নয়) এবং ৩-৪টি তাজা তুলসী পাতা সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর ধীরে ধীরে খালি পেটে পান করুন।

সতর্কতা:
এই পানীয়গুলো সহজ, সস্তা ও ঘরোয়া। তবে এগুলো কোনো রোগের চিকিৎসা নয়। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসেবে মাঝে মাঝে গ্রহণ করা যেতে পারে। অতিরিক্ত সেবন থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো জটিল রোগ আছে, তাদের অবশ্যই নিয়মিত গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

মনে রাখবেন, বড় পরিবর্তনের জন্য অনেক সময় ছোট ছোট অভ্যাসই যথেষ্ট—শুরু হোক একটু একটু করে, এক গ্লাস পানীয় থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *