free tracking

ট্রফি জেতায় আর্জেন্টিনাই দুনিয়ার সেরা দল, ব্রাজিলের অবস্থান কোথায়?

পৃথিবীর ২১১টি ফিফা স্বীকৃত দেশের প্রতিটিরই রয়েছে নিজস্ব জাতীয় ফুটবল দল। এর বাইরেও রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র অঞ্চল ও অঞ্চলের জাতীয় দল, যারা ফিফার সদস্য না হয়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নেয়। কিন্তু এতসব দলের মধ্যে কারা সবচেয়ে সফল? ট্রফির সংখ্যা দিয়েই যদি বিচার করা হয়, তাহলে সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে একটি পরিচিত নাম—আর্জেন্টিনা। বড় প্রতিযোগিতায় জেতা শিরোপার হিসেবে আর্জেন্টিনাই বিশ্বের সবচেয়ে সফল জাতীয় দল। দক্ষিণ আমেরিকার তিন পরাশক্তি শীর্ষস্থান দখল করলেও, শীর্ষ দশে রয়েছে কিছু চমকপ্রদ নাম—যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো, যারা ইউরোপের বহু বিশ্বজয়ী দলের চেয়েও এগিয়ে!

স্পেন (৬ ট্রফি)
ডেনমার্কের বিপক্ষে ১৯২০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল স্পেন জাতীয় দল। এরপর কেটে গেছে ১০৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে স্পেন ছয়বার বড় প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছে। ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিকে ফুটবলে স্বর্ণপদকও জিতেছিল ‘লা রোহা’। তবে সেই সাফল্যকে জাতীয় দলের শিরোপা হিসেবে ধরা হয় না, কারণ সেবার থেকেই অলিম্পিকে অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলানোর নিয়ম চালু হয়। কোচ লুইস আরাগোনাস ও ভিসেন্তে দেল বস্কের অধীনে স্পেন ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলে দাপট না ছড়ালে এই তালিকায় জায়গা হতো না। ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো জয়ের মাঝে ২০১০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে স্পেনের সর্বশেষ শিরোপা ২০২৩ সালে উয়েফা নেশনস লিগ জয়। ১৯৬৪ ইউরো জয় ছিল স্পেনের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা।

ইতালি (৭ ট্রফি)
ইউরোপিয়ান ফুটবলের পরাশক্তি। ১৯১০ সালে জাতীয় দল গঠনের পর এ পর্যন্ত চারবার বিশ্বকাপ জিতেছে ইতালি। এর বাইরে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর ইউরো জিতেছে দুবার। ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টে সোনা জিতেছে ইতালি। তখন জাতীয় দল খেলানোয় এই সাফল্য বিবেচনা করা হয়েছে তালিকায়। সব মিলিয়ে ৭ বার বড় প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছে ইতালি।

মিসর (৭ ট্রফি)
স্পেনের মতো মিসরের জাতীয় ফুটবল দল গঠন করা হয় ১৯২০ সালে। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রথম বিশ্বকাপে খেলা এই দলটি আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে সবচেয়ে বেশিবার শিরোপা জিতেছে। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এ প্রতিযোগিতায় ৭ বার চ্যাম্পিয়ন হয় ‘ফারাও’রা। এর বাইরে বড় প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে ১৯৯২ সালে আরব কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মিসর। কিন্তু সেবার আরব গেমসের অধীনে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।

জার্মানি (৮ ট্রফি)
১৯০৮ সালে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলেছিল জার্মানি জাতীয় ফুটবল দল। নিজেদের ১১৭ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৮ বার বড় প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছে জার্মানি। চারবার জিতেছে বিশ্বকাপ। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা ইউরো জিতেছে তিনবার। এর পাশাপাশি একবার কনফেডারেশনস কাপও জিতেছে জার্মানি।

ফ্রান্স (৯ ট্রফি)
ফ্রান্সের জাতীয় দল গঠন করা হয় ১৯০৪ সালে। নিজেদের ১২১ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৯ বার বড় প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছে ফ্রান্স। দুবার করে হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮৫ সালে জিতেছে ফিনালিসিমা—যেটা আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৮৪ ইউরোজয়ী ফ্রান্স ও ১৯৮৩ কোপা আমেরিকাজয়ী উরুগুয়ের মধ্যে। ২০২১ সালে জিতেছে নেশনস লিগ এবং দুবার অধুনালুপ্ত কনফেডারেশনস কাপ জিতেছে ফ্রান্স। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টেও সোনা জিতেছিল ‘ব্লুজ’রা।

যুক্তরাষ্ট্র (১০ ট্রফি)
১৮৮৫ সালে কানাডার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দল। নিজেদের ১৪০ বছরের ইতিহাসে ১০ বার বড় প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর আমেরিকার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে ৭ বার। কনক্যাকাফ নেশনস লিগ জিতেছে ৩ বার।

মেক্সিকো (১৪ ট্রফি)
মেক্সিকো জাতীয় ফুটবল দল প্রথম ম্যাচ খেলে ১৯২৩ সালে। নিজেদের ১০২ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ১৪ বার বড় প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছে মেক্সিকো। একবার কনফেডারেশনস কাপ জয়ের পাশাপাশি ১৩ বার জিতেছে কনক্যাকাফ গোল্ড কাপ। এ বছরও প্রতিযোগিতাটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মেক্সিকো।

ব্রাজিল (১৮ ট্রফি)
ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সফল এই দল নিজেদের ইতিহাসে প্রথম ম্যাচ খেলে ১৯১৪ সালে। ১১১ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল। কনফেডারেশনস কাপ জিতেছে চারবার এবং নয়বার জিতেছে কোপা আমেরিকা। সব মিলিয়ে ১৮ বার বড় প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। এর বাইরে অলিম্পিক ফুটবলে সোনা আছে ব্রাজিলের ও প্যান আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছে দুবার। কিন্তু প্যান আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ ফিফা টুর্নামেন্ট ছিল না। ২০১৬ রিওয়ে ও ২০২১ সালে টোকিওতে ফুটবল ইভেন্টে সোনা জিতেছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেটি ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল।

উরুগুয়ে (১৯)
১৯০২ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে উরুগুয়ে। এ পর্যন্ত ১৯টি বড় প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছে উরুগুয়ে। বিশ্বকাপ জিতেছে দুবার, কোপা আমেরিকা জিতেছে ১৫ বার। এর বাইরে ১৯২৪ ও ১৯২৮ অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টেও সোনা জিতেছে উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের আগে সে সময় অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টকে বড় প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

আর্জেন্টিনা (২২)
আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাস ১২৩ বছরের। বড় প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়ের সংখ্যা বিচারে আর্জেন্টিনাই সবচেয়ে সফল। বিশ্বকাপ জিতেছে তিনবার, কোপা আমেরিকা জিতেছে রেকর্ড ১৬ বার। কনফেডারেশনস কাপ জিতেছে ১ বার। দুই মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নের ম্যাচ ‘ফিনালিসিমা’ জিতেছে ২ বার। ২০০৪ ও ২০০৮ অলিম্পিকে আর্জেন্টিনা সোনা জিতলেও সেটা ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *