বাংলাদেশে কিডনি রোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভয়াবহ হারে। অথচ অধিকাংশ মানুষ কিডনির সমস্যা চেনার প্রাথমিক লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না বা বুঝেও অবহেলা করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি বিকল হওয়ার আগে শরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত পাঠায়—যেগুলো সময়মতো চিনে নিলে বিপদ এড়ানো সম্ভব।
৫২ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি জানতে পারেন, তার কিডনি প্রায় পুরোপুরি বিকল। নিয়মিত ডায়ালিসিস ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। অথচ কয়েক মাস আগেও তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন বলে মনে করতেন। শুধু হালকা ক্লান্তি, পায়ে সামান্য ফোলা আর প্রস্রাবে ফেনা—এসবকে তিনি গুরুত্ব দেননি। আর সেই অবহেলাই ঠেলে দেয় তাকে ভয়াবহ কিডনি ব্যর্থতার দিকে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিডনি রোগের বিস্তারের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো সময়মতো রোগ নির্ণয় না হওয়া।
কিডনির সমস্যা চেনার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ১. প্রস্রাবের ধরনে পরিবর্তন (পরিমাণ কমে যাওয়া বা বাড়া, রঙ বদলানো, ফেনা, ব্যথা)।২. পায়ে, মুখে, হাতে ও পেটে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া।৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা।৪. শ্বাসকষ্ট হওয়া।৫. ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা মুখে অস্বাভাবিক স্বাদ।৬. তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি বা ত্বকের শুষ্কতা।৭. পেশিতে টান, দুর্বলতা বা অসাড়তা।৮. অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা বা কাঁপুনি।৯. পিঠে বা কোমরে ব্যথা, বিশেষ করে কিডনি অঞ্চলে।১০. নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বা মুখে ধাতব স্বাদ।
চিকিৎসকরা বলছেন, এসব লক্ষণের যেকোনোটি কয়েকদিনের বেশি সময় থাকলে অবহেলা না করে একজন নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিডনি রোগের পেছনে লুকিয়ে থাকা প্রধান কারণডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ, কিডনিতে পাথর, ব্যথানাশক ওষুধের অপব্যবহার, স্থূলতা, ধূমপান, প্রোস্টেট বড় হওয়া এবং বারবার সংক্রমণ—এসবই দীর্ঘমেয়াদে কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশের ভয়াবহ চিত্রবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩৫-৪০ হাজার মানুষ শেষ পর্যায়ের কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। যাদের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন হয় নিয়মিত ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন। অথচ এসব চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং অধিকাংশ রোগীর পক্ষে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।
কীভাবে কিডনি ভালো রাখা যায়?১. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পান৩. ধূমপান ও ব্যথানাশক ওষুধের অপব্যবহার এড়িয়ে চলা৪. শরীরচর্চা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ৫. বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে পর্যবেক্ষণে রাখা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির সমস্যা একবার গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে চিকিৎসা যেমন কঠিন, তেমনি ব্যয়বহুল। তাই কিডনির যত্ন নেওয়া এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহেলা না করাই জীবন রক্ষার মূল চাবিকাঠি।
Leave a Reply