স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার, আর দায়িত্ব ছিল দেশ মাতৃকার সুরক্ষায় আকাশে উড়বার। সেই দায়িত্ব পালনের শেষ প্রশিক্ষণে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আহমেদ সাগর। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঢাকায় তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা রাজশাহীজুড়ে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় তৌকির আহমেদ সাগরের জানাজা। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তার পরিবারের সদস্য, স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এলাকাবাসী, সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
জানাযা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর সপুরা গোরস্থানে। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় এই তরুণ বৈমানিককে। গার্ড অব অনার শেষে, অশ্রুসিক্ত পরিবেশে তাকে শায়িত করা হয় মাটির বুকে। এক হৃদয়বিদারক বিদায়ের সাক্ষী হলো রাজশাহী।
তৌকিরের দাফন চলাকালীন পুরো এলাকা ছিল শোকস্তব্ধ। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবার ও স্বজনরা। আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো সপুরা কবরস্থান।
এর আগে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তৌকিরের মরদেহ রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তার মরদেহ নেয়া হয় উপশহরের বাসায়। তৎক্ষণাৎ সেখানে এক বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাড়ির আঙিনায় ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীসহ পরিচিতরা। সবার চোখে ছিল পানি, মুখে ছিল স্তব্ধতা।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় ঢাকা সেনানিবাসে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার শৈশবের শহর রাজশাহীতে।
তৌকির আহমেদ সাগরের মৃত্যুতে শোকের আবহে ছেয়ে যায় গোটা রাজশাহী নগরী। সকাল থেকেই ভিড় জমে তার বাসায়। শুধু স্বজনরাই নয়, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনরাও এসেছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে দোয়া মাহফিলের।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম শুধু পরিবারের গর্ব ছিলেন না, তিনি ছিলেন এলাকার অহংকার, যুবসমাজের অনুপ্রেরণা। তার এভাবে চলে যাওয়া যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
আজ রাজশাহীর আকাশে সূর্য অস্ত গেল, তবে পাইলট তৌকিরের স্বপ্ন আর সাহসিকতা থেকে যাবে অসংখ্য তরুণের হৃদয়ে। বুকভরা গর্ব আর চোখভরা জল নিয়ে রাজশাহী জানালো- বিদায় তৌকির, তোমার আকাশ যাত্রা থেমে গেলেও তুমি থাকবে চির অমলিন।
Leave a Reply