ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষেই রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারেট নিউজ-এ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এ কথা জানান।
ড. ইউনূস লেখেন, “আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি—আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আমি আর কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না। আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে সব রাজনৈতিক দল তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারে এবং দেশি-বিদেশি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে।”
নিবন্ধে তিনি ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের কথা তুলে ধরেন, যেটি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে শেষ হয়। তিনি জানান, “গত বছরের আগস্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন স্বৈরশাসক দেশত্যাগে বাধ্য হন। সেই শূন্যতায় ছাত্রনেতাদের অনুরোধে আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করি।”
ড. ইউনূস বলেন, তার সরকার প্রতিষ্ঠার পরই জাতীয় পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, নির্বাচন আয়োজন এবং চুরি যাওয়া সম্পদ উদ্ধারে কাজ করছি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, আগের সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ ফেরত আনতেই আমরা যুদ্ধ করছি।”
তিনি আরও লেখেন, “আমরা নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করছি, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের তদন্ত চালাচ্ছি এবং সরকারি প্রশাসনে ন্যায্যতা ফেরাতে কাজ করছি। যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল, তারা আজ আমাদের পাশে। সশস্ত্র বাহিনীও পেশাদার ভূমিকা রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।”
পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের কথা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা পাচ্ছি। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আমাদের সহায়তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।”
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি তারা একটি বৃহৎ সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছেন, যার মধ্যে একটি সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাবও রয়েছে—যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আর কখনো স্বৈরাচারী সরকার যেন ফিরে না আসে।
তিনি নিবন্ধের শেষ অংশে বলেন, “বাংলাদেশ যদি এমন একটি দেশে রূপ নেয়, যেখানে প্রতিটি নাগরিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বাঁচতে পারে—তবে সেটি হবে জনগণের দৃঢ়তা, কল্পনা ও সাহসের জয়। এই মুহূর্তে যারা আমাদের পাশে আছেন, তারাই আমাদের শেষ আশা।”
Leave a Reply