শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি প্রচলিত সমস্যা। ২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ১৮ শতাংশ টডলার এবং ১৪ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে। সাধারণত এই সমস্যা সাময়িক হয়, তবে সঠিক কারণ জানা গেলে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. রিনারানি সাংঘাভি জানিয়েছেন, শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে কিছু সাধারণ কারণ কাজ করে থাকে।
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাব্য কারণগুলো
১. প্রক্রিয়াজাত খাবার
শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব খাবারে প্রায় কোনো আঁশ থাকে না, অথচ নিয়মিত মলত্যাগের জন্য আঁশ অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন শিশুকে ২০-২৫ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্যজাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিত।
২. দুগ্ধজাত খাবার
অতিরিক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্পর্ক রয়েছে। শিশুর যদি এ সমস্যা দেখা দেয়, তবে চিজ, দুধ ইত্যাদির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ভালো।
৩. মানসিক চাপ
শিশুর মানসিক চাপ সরাসরি হজম প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে। শিশুর চাপের কারণ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলার উপায় খুঁজে দেওয়া জরুরি।
৪. পানিশূন্যতা
যথেষ্ট পানি না খেলে শিশুর মল শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে তা বের করতে কষ্ট হয়। তাই প্রতিটি খাবারের সঙ্গে অন্তত এক গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. রুটিনের পরিবর্তন
শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন এলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। যেমন—ভ্রমণ, নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়া, ছুটির সময় বা দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে থাকা ইত্যাদি। এসব পরিবর্তনের সময় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় টয়লেট ব্যবহারের অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।
৬. ভিডিও গেমস
অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অনেক শিশু গেমে মগ্ন থেকে টয়লেটে যেতে ভুলে যায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে যাওয়া এড়িয়ে চলে। তাছাড়া ভিডিও গেম খেলায় শারীরিক নড়াচড়া কমে যায়, যা হজমের জন্য ক্ষতিকর। তাই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
৭. পটি ট্রেনিং
পটি ট্রেনিং শিশুদের জন্য বড় একটি পরিবর্তন। অনেক শিশু এ সময়ে টয়লেট ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে, ফলে মল চেপে রাখে। এজন্য পটি ট্রেনিংকে আনন্দদায়ক করে তোলা এবং দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৮. ওষুধ
কিছু ওষুধ বা খাদ্য-পরিপূরক শিশুদের হজমপ্রক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে। যদি শিশুর নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের তালিকা পর্যালোচনা করা জরুরি।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত খাবার, জীবনযাপন বা মানসিক চাপে সম্পর্কিত। তাই সময়মতো কারণ শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাটি দূর করা সম্ভব। তবে ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অবশ্যই শিশুর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক যত্ন ও সচেতনতাই শিশুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে।
সূত্র: চিল্ডেন’স হেলথ
Leave a Reply