free tracking

অতিরিক্ত কার্টুন দেখা শিশুদের মস্তিষ্ক ও আচরণে কী ধরনের প্রভাব ফেলে!

কার্টুন শিশুদের কাছে আনন্দের বিষয়। অনেক সময় এগুলো শিক্ষণীয়ও বটে। তবে যখন শিশু অতিরিক্ত সময় ধরে কার্টুন দেখে, তখন মজার এই বিষয়টিই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু কী ধরনের কার্টুন দেখছে, কতক্ষণ ধরে দেখছে এবং বাবা-মা কতটা সঙ্গ দিচ্ছেন এসবের ওপর নির্ভর করছে কার্টুনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব। শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পূজা কপূর এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

কার্টুনের ইতিবাদক দিক: কার্টুন তৈরি করা হয় শিশুদের আকর্ষণ করার মতো করে রঙিন ছবি, প্রাণবন্ত চরিত্র আর সহজবোধ্য গল্প দিয়ে। এর মাধ্যমে একটি শিশু খুব দ্রুত ভাষা শিখতে পারে, নতুন শব্দ মুখস্থ করতে পারে এবং বিভিন্ন বাক্য গঠনের নিয়ম বুঝতে শুরু করে। শুধু ভাষাই নয়, কার্টুনে ব্যবহৃত নানা রঙ, আকার, সংখ্যা কিংবা প্রতীক শিশুর মনে সহজে গেঁথে যায়। যেমন, বিভিন্ন প্রাণীর নাম, খাবারের ধরন, এমনকি ভদ্রতা বা সামাজিক আচরণ সম্পর্কেও শিশুরা কার্টুন থেকে শিখে নেয়। বিশেষ করে ‘সিসিমি স্ট্রিটের’ এর মতো শিক্ষামূলক কার্টুন শিশুদের ভাষা ও সংখ্যা শেখায়। তবে বাবা-মায়ের অংশগ্রহণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত কার্টুন দেখার ক্ষতিকর দিক: বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত কার্টুন দেখার বেশকিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো:

মনোযোগ কমে যাওয়া: মাত্র নয় মিনিট দ্রুতগামী কার্টুন দেখার পরই প্রি-স্কুল শিশুদের মনোযোগ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমে যেতে দেখা গেছে।

দীর্ঘমেয়াদি বিকাশে বিলম্ব: ২-৫ বছর বয়সী যারা বেশি সময় স্ক্রিনে কাটায়, তাদের ভাষা, স্মৃতি ও সামাজিক দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ধীরগতিতে গড়ে ওঠে।

আচরণগত পরিবর্তন: অনেক সময় শিশুরা কার্টুনের আক্রমণাত্মক কাজ অনুকরণ করে বা অস্বাভাবিক ভঙ্গিমা ও কথোপকথনের ধরন গ্রহণ করে। তারা বাস্তব ও কল্পনার পার্থক্য বুঝতেও সমস্যায় পড়ে।

জ্ঞান ও আবেগের চাপ: ফ্যান্টাসিভরা, দ্রুত দৃশ্য পরিবর্তন হওয়া কার্টুন শিশুদের জ্ঞানীয় ব্যবস্থাকে চাপে ফেলে। এতে মনোযোগ কমে, স্মৃতি দুর্বল হয় এবং হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা বাড়ে।

সামাজিক ও মানসিক সমস্যা: বেশি সময় কার্টুন দেখার কারণে বাস্তব খেলাধুলা ও কথোপকথনের সুযোগ কমে যায়। এতে শিশুদের সামাজিক দক্ষতা কমে, উদ্বেগ বাড়ে, ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

শারীরিক ক্ষতি: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে শারীরিক কার্যক্রম কমে যায়। খারাপ ভঙ্গিমা, চোখের চাপ, মাথাব্যথা এমনকি ওজন বাড়ার ঝুঁকিও থাকে।

সঠিক ভারসাম্য তৈরি করার উপায়: পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্টদের মতে, কার্টুনকে শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই সচেতনভাবে। তারা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এগুলো হলো:

  •  বিষয়বস্তু বাছাই: হিংসাত্মক বা অতিরিক্ত দ্রুতগতির বদলে শিক্ষামূলক কার্টুন নির্বাচন করুন।
  • শিশুর সঙ্গে বসে দেখা: বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে দেখলে শিশুরা সহজে শেখে এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পায়।
  •  সময়সীমা নির্ধারণ: প্রি-স্কুল শিশুদের জন্য দিনে এক ঘণ্টার বেশি নয়।
  •  বিকল্প উৎসাহ: খেলাধুলা, সৃজনশীল কাজ ও বাস্তব মেলামেশায় উৎসাহ দিন।
  •  বাস্তবতা বোঝানো: কার্টুনের কল্পনা ও বাস্তব জীবনের পার্থক্য শিশুদের সহজভাবে বুঝিয়ে দিন।

কার্টুন শিশুদের শেখা ও আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে, তবে অতিরিক্ত কার্টুন দেখা তাদের জ্ঞান, আচরণ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব হলো সচেতনভাবে সীমা নির্ধারণ করা এবং কার্টুনকে ইতিবাচক শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *