কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত থেকে বর্জ্য ছেঁকে বের করে, শরীরের পানি ও লবণসমতা বজায় রাখে এবং রক্তচাপ ও রক্তকণিকা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হরমোন তৈরি করে। তবে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করলে শরীর নীরবে কিছু সতর্কবার্তা পাঠায়, যা প্রাথমিকভাবে চোখে পড়ে না। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব প্রাথমিক উপসর্গ চিনে নিতে পারলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, ফলে জটিলতা এড়ানো যায়।
বিশেষজ্ঞ সংস্থা কিডনি কেয়ার ইউকে-এর তথ্যমতে, সকালে চোখ-মুখে ফোলা, প্রস্রাবে অস্বাভাবিক ফেনা, ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি, মানসিক ধোঁয়াশা বা মনোযোগে ঘাটতি এবং মুখে দুর্গন্ধ এসবই কিডনি সমস্যার সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই উপসর্গগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
সকালে যে উপসর্গগুলো কিডনির সংকেত হতে পারে
দিনের শুরুতে কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গকে কখনই হেলাফেলা করা উচিত নয়। অনেক সময় সকালে কিডনির সমস্যার সূক্ষ্ম লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন চোখের চারপাশে ফোলা, অস্বাভাবিক প্রস্রাব, অকারণ ক্লান্তি বা বমি বমি ভাব। এসব উপসর্গকে অবহেলা করলে তা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পর্যাপ্ত পানি পান এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস কিডনির সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মুখ ও চোখে ফোলা
সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ বা মুখ ফোলা কিডনির সমস্যার একটি সাধারণ ইঙ্গিত। কিডনির অসুখে রক্তে প্রোটিনের মাত্রা কমে যায়, ফলে শরীরের তরল ঢুকে পড়ে আলগা টিস্যুতে। রাতে শোওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ফোলা দেখা দেয় চোখের চারপাশে। পরবর্তীতে এ ফোলা পায়ের পাতাতেও নেমে যেতে পারে। যদি এর সঙ্গে প্রস্রাবে ফেনা, রক্তচাপ বৃদ্ধি বা ওজন বেড়ে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রস্রাবে ফেনা
প্রস্রাবে বারবার এবং স্থায়ীভাবে ফেনা বা বুদবুদ দেখা দিলে তা কিডনির ক্ষতির লক্ষণ হতে পারে। এর মানে হচ্ছে প্রস্রাবে প্রোটিন মিশছে, যা গ্লোমেরুলার ক্ষতির প্রাথমিক ইঙ্গিত। যদিও পানিশূন্যতা বা দ্রুত প্রস্রাব করলেও সাময়িক ফেনা হতে পারে, কিন্তু তা যদি নিয়মিত দেখা দেয়, তবে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে।
ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য জমে যায় এবং খনিজের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে ত্বক অস্বাভাবিক শুষ্ক হয়ে যায় এবং বারবার চুলকায়, যা সাধারণ ময়েশ্চারাইজারে সহজে কমে না। দীর্ঘমেয়াদে এ উপসর্গ কিডনি রোগের গুরুতর ধাপে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিতে পারে।
মানসিক ধোঁয়াশা বা ক্লান্তি
কিডনি দুর্বল হলে রক্তে টক্সিন জমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, ভুলে যাওয়া বা মস্তিষ্ক ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় রক্তস্বল্পতাও এর সঙ্গে জড়িত থাকে।
মুখে দুর্গন্ধ
কিডনি রক্ত থেকে ইউরিয়া ফিল্টার করতে ব্যর্থ হলে তা লালার সঙ্গে মিশে অ্যামোনিয়ার মতো দুর্গন্ধ তৈরি করে। মুখে প্রস্রাবের মতো দুর্গন্ধ, সঙ্গে বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা শরীরে ফোলা এসব লক্ষণ একসঙ্গে দেখা দিলে তা গুরুতর কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
কিডনি রোগ: কারণ ও জটিলতা
বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান কারণ। এছাড়া বারবার কিডনির সংক্রমণ, জিনগত রোগ, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া বা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসও কিডনি ক্ষতির জন্য দায়ী।
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, কিডনি রোগকে অবহেলা করলে এর জটিলতা বহুমুখী হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, হৃদরোগ, ফুসফুসে পানি জমা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি, এমনকি জীবনহানির ঝুঁকি।
কিডনি রোগ নীরবে ধীরে ধীরে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সকালে দেখা দেওয়া ছোট ছোট উপসর্গগুলোকেই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও নিয়মিত পরীক্ষা কিডনিকে সুস্থ রাখার সবচেয়ে বড় উপায়। কিডনির যত্ন মানেই সুস্থ শরীর ও দীর্ঘায়ু।
সূত্র: https://tinyurl.com/4347ew7t
Leave a Reply