চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৪ বছর নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এটি সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা থেকে দুই বছর বেশি।
এছাড়াও, বিভিন্ন করপোরেশন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডসহ বিশেষায়িত পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা যথাক্রমে ৩৫ বছর ও ৪০ বছর আগের নিয়ম অনুযায়ী বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থায় সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ সংশোধন করে চিকিৎসক, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩২ বছর করে গত বছরের ১৮ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই অধ্যাদেশ জারির ফলে সবার জন্য সব ধরনের সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর হয়েছে। এই অধ্যাদেশ জারির আগে সাধারণ প্রার্থীরা ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারতেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়সসীমা ৩৫ ও ৪০ বছর নির্ধারিত ছিল।
সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করায় এর আগে যাঁরা বিশেষ সুবিধা পেতেন, তা বাতিল হয়ে যায়। চিকিৎসকদের ইন্টার্ন করার পর চাকরিতে প্রবেশ করতে হয় বলে তাঁরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্যদের থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৩৪ বছর করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দাবি জানান। এরপর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়।
পিএসসির প্রস্তাবে আগের অধ্যাদেশ সংশোধন করে নতুন একটি ধারা সংযোজনের সুপারিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘এই অধ্যাদেশ জারির প্রাক্কালে যে সকল সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের কোনো পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৩ বছর কিংবা তদূর্ধ্ব কোনো বয়সসীমা নির্ধারিত আছে, সে সকল বয়সসীমা অপরিবর্তিত ও বহাল থাকবে।’ অধ্যাদেশ সংশোধন করে বিষয়টি ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করেছে পিএসসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পিএসসির প্রস্তাবটি অসম্পূর্ণ হওয়ায় তাদের পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়। এরপর পিএসসি জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, চিকিৎসক এবং প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স সাধারণ প্রার্থীদের থেকে বেশি হওয়া উচিত। এর বাইরে পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়সসীমা আগের মতো ৩৫ ও ৪০ বছর রাখার পক্ষে মত দেয় পিএসসি।
পিএসসির প্রস্তাব পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিকিৎসক এবং প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৪ বছর করার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স দুই বছর বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো সুপারিশ না করে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।
অধ্যাদেশ সংশোধন করতে হলে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে অধ্যাদেশ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করবে সরকার।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চাকরিপ্রত্যাশীরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত দেড় দশকে এই দাবি আমলে নেয়নি। গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি জোরালো হয়। এরপর গত বছরের ২৪ অক্টোবর চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
Leave a Reply