free tracking

নীরব ঘাতক ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, জানুন লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়!

ক্রনিক কিডনি ডিজিজে কিডনি ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। রক্ত থেকে বর্জ্য ছেঁকে ফেলার কাজ কমতে থাকে, ফলে শরীরে জমে যায় বিষাক্ত উপাদান।

আমাদের শরীরের ভেতরে নিঃশব্দে কাজ করে চলা দুটি অঙ্গ কিডনি। প্রতিদিন অসংখ্য বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন ছেঁকে শরীরকে সুস্থ রাখে এই ছোট্ট ‘ফিল্টার’। কিন্তু কিডনি যখন ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে, শরীরের ভেতর জমতে শুরু করে বিষাক্ত উপাদান। তখনই দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। বিশেষজ্ঞরা একে বলেন নীরব ঘাতক, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কোনো উপসর্গই টের পাওয়া যায় না।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ ও লক্ষণ: ক্রনিক কিডনি ডিজিজে কিডনি ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। রক্ত থেকে বর্জ্য ছেঁকে ফেলার কাজ কমতে থাকে, ফলে শরীরে জমে যায় বিষাক্ত উপাদান। কিডনি কেবল বর্জ্য ছাঁকাই করে না, বরং হরমোন উৎপাদন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা তৈরি এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে। এসব প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে শরীরে শুরু হয় নানা জটিলতা। প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে রোগ অগ্রসর হলে দেখা দেয়—

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ক্ষুধামন্দা
  • হাত-পা ও চোখে ফোলা
  • প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা বুদবুদ হওয়া
  • চুলকানি, শুষ্ক ত্বক
  • মনোযোগে সমস্যা, ঘুমে ব্যাঘাত
  • বমি ভাব, পেশি টান, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া

কারণ: দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান দুই কারণ হলো ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়া—

  • গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
  • পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (জেনেটিক সমস্যা)
  • প্রস্রাবের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া (পাথর, প্রস্টেট বা টিউমার)
  • দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
  • পুনরাবৃত্ত কিডনি সংক্রমণ
  • অ্যানিমিয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, গাউট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি, স্নায়ুর ক্ষতি, অতিরিক্ত পটাশিয়াম বা ফসফরাস জমে যাওয়া, এমনকি শরীরে পানি জমে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে।

চিকিৎসা: কিডনি রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে কিডনিকে অনেকদিন সক্রিয় রাখা সম্ভব।

  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ
  • ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
  • কিডনি-বান্ধব খাদ্যাভ্যাস
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
  • ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
  • প্রতিরোধ
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
  • রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
  • সুষম খাদ্য
  • ধূমপান-মদ্যপান বর্জন
  • ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
  • অকারণে ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ একবার শুরু হলে তা আজীবন চলতে থাকে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা, নিয়মিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেকদিন ধরে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, কিডনি রোগ যতটা ভয়াবহ, ততটাই প্রতিরোধযোগ্য। তাই সচেতন হোন, নিজের এবং পরিবারের কিডনির যত্ন নিন।

সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *