হাত-পায়ের আঙুল ফোটানো অনেকেরই অভ্যাস। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ঘাড় ও হাঁটুর মতো হাত-পায়ের আঙুল নিয়মিত ফুটিয়ে থাকেন কেউ কেউ। দীর্ঘক্ষণ কাজের পর বা কাজের মাঝে বিরতিতে ফোটান কেউ, আবার কেউ কোনো কারণ ছাড়াই ফুটিয়ে থাকেন।
হাত-পায়ের আঙুল ফোটালে ঠিক কী হয়, তা হয়তো খুব মানুষই জানেন। কিন্তু জানেন কী, আঙুল ফোটানো আপনার জন্য ভালো না খারাপ? অনেকেই হয়তো ধারণা করেন, আঙুল ফোটালে তা বড় হয়। কিন্তু এটা সত্য যে, এসব কেবলই প্রচলিত ধারণা। আবার সঠিকভাবে ফোটাতে না পারলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানকারী ওয়েবসাইট ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক অর্গানাইজেশনের প্রতিবেদনে বোর্ড সার্টিফাইড অর্থোপেডিক সার্জন কিম এল. স্টার্নস এমডি জানিয়েছেন, প্রথমে জানতে হবে আঙুল ফোটানোর সময় কী ঘটে এবং সেই ক্ষণিকের তৃপ্তি দীর্ঘমেয়াদী হয় কিনা।
আঙুল ফোটালে কী হয়:
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্টার্নসের মতে, আঙুল ফোটানোর ফলে জয়েন্টের চারপাশের স্থান থেকে গ্যাস নির্গত হয়, যা নাইট্রোজেন বুদবুদের মতো। বুদবুদগুলো সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ শুরু হয়। তিনি বলেন, গবেষকরা নিশ্চিত নন যে, আপনার আঙুল ফোটানোর শব্দ গ্যাসের বুদবুদ তৈরির নাকি নির্গত হওয়ার শব্দ। তবে এটি কেবলই গ্যাস।
আঙুল ফোটানোর ঝুঁকি ও দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সঠিকভাবে আঙুল ফোটালে তা বড় হবে না এবং আর্থ্রাইটিসও হবে না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আঙুল ফোটানোর অভ্যাসে কোনোা ধরনের ঝুঁকি নেই। বরং এতে ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই এর কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। আঙুল ফোটানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি জোর দিয়ে টানা যাবে না বা চাপ দেয়া যাবে না। আর টান দেয়ার দিক সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আঙুল ফোটানো ঠিক হচ্ছে না ভুল হচ্ছে, এটিও বুঝতে পারবেন। কেননা, এতে ব্যথা হবে।
আঙুল যদি ফুলে যায় বা বাঁকা দেখায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। লিগামেন্টে আঘাত লেগে থাকলে বা এমনিও আঙুল স্থানচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন ডা. স্টার্নস।
১৯৯৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আঙুল ফোটানোয় হাতের কবজি দুর্বল ও হাত ফুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। কিন্তু কয়েক দশক ধরে এ ফলাফল গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কেননা, ২০১৭ সালে অন্য এক গবেষণায় এর ঠিক বিপরীত তথ্য উঠে আসে। আঙুল ফোটানো এবং না ফোটানোর মধ্যে কবজির ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য ছিল না। তবে একই গবেষণায় মেটাকারপাল হেড কার্টিলেজের পুরুত্বের মধ্যে পার্থক্য দেখা গেছে। যা অস্টিওআর্থারাইটিস নির্দেশ করতে পারে। তবে তা এতটা নয় যে, আঙুল ফোটানোর কারণে হয় বলে মনে করা হয়।
ফোটালে কতটা ফোটাবেন:
২০১১ সালের ‘ক্র্যাক ইয়ার’ নামক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন ব্যক্তির আঙুল ফোটানোর পরিমাণ অস্টিওআর্থারাইটসের ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা। তবে খবরটি ভালো ছিল, আঙুল ফোটানোর পরিমাণ এবং এর সময়কাল আপনার জয়েন্ট ফুলে যাওয়া বা অস্টিওআর্থারাইটসের ঝুঁকি বাড়ায় বা কমায় না।
আঙুল ফোটানো আপনার জন্য ভালো না খারাপ:
আঙুল ফোটানো আপনার জন্য ভালো না খারাপ, সেটি অবশ্যই জানা প্রয়োজন। কারও কাছে আঙুল ফোটানো আঙুল শক্ত হয়ে যাওয়া দূর করার একমাত্র উপায় বলে মনে করা হয়। আবার কারও কাছে এটি কেবল একটি অভ্যাস। কেউ কেউ শব্দের জন্য আবার ঘরে-বাইরে শুধুই মজার জন্য করে। তবে কখনো এটি স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেললে অবশ্যই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।
Leave a Reply