ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি নামজারি (মিউটেশন) প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে তিনটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে ।
নতুন এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জমির প্রকৃত মালিক যেন আর কোনো হয়রানির শিকার না হন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা যেন সুযোগ না পান—সেই লক্ষ্যে নামজারির প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
নতুন তিনটি পদক্ষেপ হলো:
সাধারণ নামজারির নতুন নির্দেশনা: নথি পূর্ণ থাকলে আবেদন খারিজ করা যাবে না
যেসব ব্যক্তি নতুনভাবে জমি কিনেছেন এবং মালিকানা ভোগ করছেন, তাঁদের জন্য বিদ্যমান নামজারি পদ্ধতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা সংযোজন করা হয়েছে।
আবশ্যক নথিপত্র:
দলিলের মূল কপি (সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সৃষ্ট রেজিস্ট্রিকৃত দলিল)
বায়া দলিল বা পূর্ব মালিকের মালিকানা প্রমাণ
সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় পর্যন্ত পরিশোধিত খাজনা রশিদ
বর্তমান নকশা ও ম্যাপ (যদি প্রযোজ্য হয়)
আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও দুই কপি পাসপোর্ট ছবি
পূর্ব মালিকের ছবি ও পরিচয়পত্রের কপি
এই নথিগুলো না থাকলে আবেদন খারিজ হতে পারে। তবে যদি কিছু ভুল থাকে বা তথ্য অসম্পূর্ণ হয়, সংশোধনের সুযোগ রেখে তা সহজে জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে, এবং ভূমি অফিস তা গ্রহণে বাধ্য থাকবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সময় লাগলেও কোনো অনিয়ম না হলে নামজারি সম্পন্ন করতে হবে—এমন কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব অফিসকে।
ওয়ারিশান সম্পত্তির ক্ষেত্রে যৌথ খতিয়ান, তবে দলিল ছাড়া একক মালিকানা নয়
ওয়ারিশান সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণে ভূমি মন্ত্রণালয় নতুনভাবে “যৌথ খতিয়ান” পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছে।
যদি ওয়ারিশদের মধ্যে আপোস বণ্টন না হয়, সেক্ষেত্রে সকল ওয়ারিশের নামে যৌথভাবে খতিয়ান তৈরি করা হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে:
ইউনিয়ন পরিষদ/উপজেলা পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহ করা ওয়ারিশান সনদ
জমির পূর্বের মালিকানার দলিল, খাজনা রশিদ ইত্যাদি
এই নথি জমা দেওয়ার পর ভূমি কমিশনার স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকলের নামে যৌথ খতিয়ান তৈরি করবেন, যেখানে প্রত্যেক ওয়ারিশ কত শতাংশ মালিক তা নির্দিষ্ট থাকবে।
যদি কেউ আলাদাভাবে নিজের নামে খতিয়ান করতে চান, তাঁকে অবশ্যই বৈধ দলিল দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
অটোমেশন পদ্ধতিতে দ্রুত নামজারি: তিনটি সেবা এক জায়গায়
ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় “অটোমেশন প্রক্রিয়ায় নামজারি” চালু করেছে।
প্রাথমিকভাবে ২১টি উপজেলায় এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সারা দেশে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে।
এই সিস্টেমে কী থাকছে:
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দলিল রেজিস্ট্রেশনের পর তা সরাসরি ভূমি অফিসে পাঠাবে
ভূমি অফিস স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকানা যাচাই করে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট পাঠাবে
এরপর এক ক্লিকেই সম্পন্ন হবে দলিল রেজিস্ট্রেশন + খতিয়ান সংশোধন + অনলাইন সংযুক্তি
প্রতিটি মালিকের জন্য থাকবে একটি ওয়েব প্রোফাইল ও কিউআর কোড, যেখানে ঢুকলেই দেখা যাবে তার জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল তথ্য ও ডকুমেন্ট।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য:“এই তিনটি সেবা একত্রে পাওয়ার ফলে নামজারি হবে ঝামেলাহীন, দ্রুত ও স্বচ্ছ। দুর্নীতির কোনো সুযোগ থাকবে না।”
ভূমি মালিকদের হয়রানি রোধ ও দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল নামজারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।এই তিনটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে ভূমি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply