দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মোট ৬৪টি ‘মডেল মন্দির’ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। প্রতিটি মন্দির নির্মাণে ১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর টিকাটুলির শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানান।
তপন মজুমদার বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সারা দেশে সাড়ে পাঁচশ’রও বেশি মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছে। কিন্তু একটি মডেল মন্দিরও নির্মাণ করেনি। অথচ তারা নিজেদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের একমাত্র ভরসা হিসেবে উপস্থাপন করত। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা হিন্দুদের বিপদে ফেলে ভারতে চলে গেছেন।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় এক হাজার একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা এসব সম্পত্তি দখল করেছেন, তাদের কাছে তিনি অনুরোধ জানান দ্রুত সম্পত্তি ছেড়ে দিতে। তাহলে মডেল মন্দির নির্মাণে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্ট ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনকে সাংগঠনিকভাবে আরও বিস্তৃত করতে বিভিন্ন উপশাখা গঠনের পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, হিন্দু ইকোনমিকস ফেডারেশন, হিন্দু কালচারাল ফেডারেশন, হিন্দু নারী ফেডারেশন, হিন্দু যুব ফেডারেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে এবং সংগঠনকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করা হলেও বাস্তবে এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য চলছে। সরকারি দপ্তর, মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান হামলা, মামলা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সম্মেলনের শেষ পর্বে বরুন চন্দ্র সরকারকে সভাপতি এবং রঘুপতি সেনকে মহাসচিব করে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) ৪৫ সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
Leave a Reply