সম্প্রতি মক্কার পবিত্র কাবা শরিফে দেখা গেছে এক বিরল ও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মহাজাগতিক দৃশ্য। শুক্রবার ফজরের সময়, আকাশে উদিত গিব্বাস চাঁদটি সরাসরি কাবা ঘরের ঠিক ওপরে অবস্থান নেয়। মুহূর্তটি ছিল এমন যে, যেন চাঁদ নেমে এসেছে কাবার মাথার ওপর—আল্লাহর ঘরের ওপর আকাশের সবচেয়ে রহস্যময় সৃষ্টি। দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করে আবেগে কেঁদে ফেলেন অনেক মুসল্লি।
আল-কুরআনের সূরা আল-কামার-এর প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে:”কিয়ামত ঘনিয়ে এসেছে, আর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।”
এই আয়াত বহু বছর ধরেই মুসলিমদের মধ্যে কিয়ামতের আলামত নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। চাঁদকে ধরা হয় আল্লাহর কুদরতের প্রতীক হিসেবে; আর কাবা শরিফ—ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-এর হাতে নির্মিত প্রথম ইবাদতের ঘর—মানবজাতির হেদায়েতের চিরন্তন প্রতীক।
প্রকৃতির এই দৃশ্য যেন মুমিনদের ঈমানকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলে। জুমার দিনের সকাল, কাবা ঘরের পবিত্রতা, আর ঠিক তার ওপরে চাঁদের অবস্থান—সব মিলিয়ে মুহূর্তটি ছিল অসাধারণভাবে আধ্যাত্মিক ও ভাবগম্ভীর।
বিষয়টির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব থাকলেও, এর পেছনে রয়েছে নিখুঁত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও।সৌদি অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির প্রধান মাজিদ আবু জাহরা জানান, এই দৃশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের অসাধারণ নির্ভুলতার প্রতিফলন। তার ভাষায়:“এই চাঁদের অবস্থান প্রমাণ করে আমাদের জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতি কতটা উন্নত ও নির্ভরযোগ্য। এটি চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ নির্ধারণে আমাদের দক্ষতার একটি বাস্তব উদাহরণ।”
তিনি আরও জানান, এই ধরনের মহাজাগতিক ঘটনাগুলো নামাজের সময়, কিবলার নির্ণয় এবং অন্যান্য ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শুধু কাবা শরিফের উপর চাঁদ নয়—শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁদ পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে সপ্তর্ষি মণ্ডলের (Seven Sisters) সামনে দিয়ে যায়, এবং একে একে কিছু নক্ষত্রকে আড়াল করে দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই চমকপ্রদ দৃশ্য দেখা গেছে।
ইসলামের ইতিহাসে জ্যোতির্বিদ্যার গুরুত্ব নতুন কিছু নয়। ইসলামী সভ্যতার জ্যোতির্বিদরা শত শত বছর আগে থেকেই চাঁদ, সূর্য ও নক্ষত্রের গতিপথ বিশ্লেষণ করে নামাজের সময় ও কিবলা নির্ধারণ করে আসছেন।
এ দিনের এই বিরল ঘটনা তাদের সেই ঐতিহ্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।মুসল্লিদের জন্য এটি ছিল ঈমানের এক নতুন উপলব্ধি, আর বিজ্ঞানীদের জন্য নিখুঁত গণনার বাস্তব প্রমাণ। আধ্যাত্মিকতা আর বিজ্ঞানের অপূর্ব মেলবন্ধনের এই মুহূর্ত চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Leave a Reply