সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি এবার পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েও সুখবর আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত বিধিবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মজীবী বাবারা তাদের নবজাতকের পরিচর্যায় পাশে থাকার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন, যা দেশের সরকারি চাকরি বিধিমালায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, দেশে ২০১১ সাল থেকে কর্মজীবী মায়েদের জন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি চালু আছে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন থেকে টানা ছয় মাস সবেতনে এই ছুটি ভোগ করেন কর্মজীবী মায়েরা। কিন্তু নবজাতকের লালন-পালনে মায়ের পাশাপাশি বাবারও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তা এতদিন দেশের প্রচলিত আইনে উপেক্ষিত ছিল। বিশেষ করে, অধিকাংশ শিশু ভূমিষ্ঠ হয় সিজারের মাধ্যমে, ফলে মায়ের শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নবজাতকের দেখভালে বাবার উপস্থিতি অতি উত্তম সাহায্যকারী হতে পারে।
কর্মকর্তা আরও বলেন, অনেক সময় অসুস্থ স্ত্রী ও সন্তানকে হাসপাতালে রেখে কর্মজীবী বাবাকে অফিস করতে হয়, যা প্রায় ৯০ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবীরই অভিজ্ঞতা। মা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে নবজাতকের সম্পূর্ণ দেখভাল করতে পারেন না। ফলে নবজাতকের পরিচর্যা অনেক সময় যথাযথভাবে হয় না। এই বাস্তবতায় দিন দিন পিতৃত্বকালীন ছুটির দাবি জোরদার হচ্ছে। সরকারও এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের ৭৮টি দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রচলন রয়েছে।বাংলাদেশ ভ্রমণ
প্রতিবেশী ভারতে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে কর্মজীবী বাবারা সবেতনে ১০ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করেন এবং চাকরিজীবনে এই ছুটি দুবার পেয়ে থাকেন। পাকিস্তানে পিতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে এক মাস, যা তারা চাকরিজীবনে তিনবার ভোগ করতে পারেন। ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় এই ছুটি ১০ দিন করে দেওয়া হয়। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পোল্যান্ডে মাতৃত্বকালীন ছুটি এক বছর এবং পিতৃত্বকালীন ছুটি ৯০ দিন। অ-ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর সবচেয়ে বেশি পিতৃত্বকালীন ছুটি দিয়ে থাকে। স্পেনে শতভাগ বেতনসমেত ১২ সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটি রয়েছে।
দেশের বেসরকারি খাতের দিকে তাকালে দেখা যায়, আড়ং, ব্র্যাক এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রচলন করেছে।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়েছে, যে পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী, সেই পরিবারে পিতৃত্বকালীন ছুটি অত্যন্ত জরুরি। পিতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর পর বাবারা মানসিকভাবে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং কাজে মনোযোগী হতে পারেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কিছু দিন মা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিষণ্ন থাকেন। স্বামীর উপস্থিতি ও যত্নে নবজাতকের মা মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন এবং নবজাতকের সঙ্গে মা ও বাবার বন্ধন দৃঢ় হয়। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটানা ১৫ দিন সবেতনে পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (পার্ট-১)-এর রুলস ১৯৭-এর (সাব-রুলস-১)-এ শুধুমাত্র মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। পিতৃত্বকালীন ছুটির কোনো বিধান না থাকায় উল্লিখিত বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে উল্লিখিত বিধান সংশোধনে প্রধান উপদেষ্টার সদয় বিবেচনা ও সানুগ্রহ অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।বাংলাদেশ ভ্রমণ
এই উদ্যোগ সফল হলে সরকারি চাকরিজীবীদের পারিবারিক জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং নবজাতকের দেখভাল ও পরিচর্যায় বাবারা আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
Leave a Reply