free tracking

ব্যাংক খাত বিপর্যয়ে: ১২ ব্যাংক দেউলিয়া, ১৫টি ভঙ্গুর!

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সীমাহীন লুটপাটের কারণে আজ সাধারণ গ্রাহকরা ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছেন। বহু ব্যাংকে আমানত রাখা টাকার নিশ্চয়তা হারিয়ে গ্রাহকরা আর্থিক সংকটে ভুগছেন। বর্তমানে নামেমাত্র টিকে আছে পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক, এর বাইরে ১২টি ব্যাংক কার্যত দেউলিয়ার মুখে এবং আরও ১৫টি ব্যাংক অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, লাগামহীন দখল ও লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ শিগগিরই সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এতে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা তারল্য সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ সংকটের বিশদ চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, ১২টি ব্যাংক এখন কার্যত দেউলিয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। পাশাপাশি ১৫টি দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে অন্তত আটটি সরাসরি লুটপাটের শিকার হয়েছে।

এই সেমিনার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএপি) এবং জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ ওয়েইডেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম। এতে ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা অংশ নেন।

আলোচনায় পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন এবং ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হোসেনসহ অনেকে বলেন, এস আলম গ্রুপের একক আধিপত্য ও তার সহযোগীদের দখলদারিত্বই পুরো ব্যাংক খাতকে বিপর্যস্ত করেছে। তাদের মতে, সংস্কারের উদ্যোগ থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তা টেকসই হয়নি।

বক্তারা স্মরণ করিয়ে দেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা নেয়, তখন ব্যাংক খাত ছিল তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে এবং পরিকল্পিত লুটপাটে মদদ দিয়ে সরকার এই খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লুটপাটের অর্থের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে সেই টাকা ফেরত আনার সম্ভাবনা কার্যত নেই। এর ফলে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং আর্থিক খাতের ওপর আস্থা আরও নড়বড়ে হয়ে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *