রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আগের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। সেই সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী তদন্ত কমিশন করে পর্দার আড়ালে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের বের করে আনার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত পিলখানায় ৫৭ অফিসার ও ১৭ সিভিলিয়ান হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে মোট সাত দফা দাবি জানান তারা।
বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের পুত্র রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় রাকিন আহমেদের মা নাজনীন আহমেদকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
১৫ বছর আগের পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিমসহ অনেকে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন রাকিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিম (শেখ ফজলুল করিম সেলিম)। আর তাদের অনেক লোক আছে, যারা জড়িত।
আমি ক্ষমা চেয়ে নিলাম। আমি বলে দিলাম। এটা সত্য। আর নাটক সাজানো, রহস্য আমরা চাই না।
পৃথিবীর ইতিহাসে আমার মনে হয় না কোনো ইভেন্ট (ঘটনা) হয়েছে, যেখানে সিটিং প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীর বুকে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে। এই কারণে (২৫ ফেব্রুয়ারিকে) আমরা শহীদ সেনা দিবস দাবি করছি।’
১৫ বছর ধরে চলা তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পর্কে রাকিন আহমেদ বলেন, ‘১৫ বছরের তদন্ত আমরা মানি না। কারণ প্রধান হত্যাকারী যে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি তখন ক্ষমতায়, গণভবনে। খুনি কি আর নিজের বিচার করবে? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত ম্যানিপুলেট (প্রভাবিত) করল, ডাল-ভাতের (অপারেশন ডাল-ভাত) কথা বলল।
নীরবতায় সহ্য করতে হয়েছে।’
তবে এর আগে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহীর পুত্র অ্যাডভোকেট সাকিব রহমানের কাছে এ প্রসঙ্গে (হত্যাকাণ্ডের জন্য কাউকে দায়ী করছেন) গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে আমি কাউকে আসলে দায়ী করতে পারি না যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। অনেক নাম আমরা শুনি, আপনারাও শোনেন। তদন্তের মাধ্যমে যখন সেই নামগুলো বেরিয়ে আসবে তখনই আমরা বলতে পারব।’
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়ে সাকিব রহমান আরো বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক বিডিআর প্রধান), যিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন। যদি এই পূর্ণাঙ্গ ও আসল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে। একইভাবে হাইকোর্ট ডিভিশন যে ইনকোয়ারি কমিশনের কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়ন করতে পারলে পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের বের করে আনা যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ না বলে এটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘শহীদ পরিবারগুলো এই ঘটনাকে কখনো বিদ্রোহ বলে না। যখন একটি বিদ্রোহ হয়, তার একটা আদর্শিক দিক থাকে। এই ঘটনার কোনো আদর্শ ছিল না। ফলে এটি বিদ্রোহ নয়, হত্যাকাণ্ড।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহত পরিবারের সদস্যরা আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। হত্যাকাণ্ডটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই অপারেশন ডাল-ভাত নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা প্রচার করা হয়েছে।
শহীদ পরিবারের সাত দাবি
সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো আগের তদন্তের প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা, হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় অনুযায়ী ইনকোয়ারি (তদন্ত) কমিশন করা, অফিশিয়াল গ্যাজেট (প্রজ্ঞাপন) করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা এবং নিহতদের শহীদের মর্যাদা দেওয়া, ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, পিলখানা ট্র্যাজেডিকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা, এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি ফেরত অথবা ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং নির্দোষ কোনো বিডিআর জওয়ানকে সাজা না দেওয়া।
Leave a Reply