শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে অনেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের জায়গায় বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন।
প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যে কোনো জটিলতা হলে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।
সোমবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশে কতিপয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদের জনসেবাসহ সাধারণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। উদ্ভূত অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য এ আদেশ জারি করা হলো:
১. অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ এবং ১০২ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন।
২। প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যে কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হলে আইনের ধারা ১০১ ও ১০২ প্রয়োগ করে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তার অধীন কর্মকর্তা, যেমন- উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রেখে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।
এর আগে দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচিত দেশের সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ৩২৩ পৌরসভার মেয়র, ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ৪৯৩টি উপজেলা চেয়ারম্যান অপসারণ করা হয়। এরপর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়।
এরপর সচিবালয়ে নিজ দফতরে ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণের বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ সাংবাদিকদের জানান, এখনই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হচ্ছে না। যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদেও প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে এখন হাত দিচ্ছি না। যাচাই-বাছাই করে দেখা যাক সেখানে কার্যক্রম কী রকম আছে, যদি পরবর্তীকালে প্রয়োজন হয় বা প্রয়োজনের তাগিদে কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়, সেটি নেয়া হবে। আর দৈনন্দিন যে কাজগুলো নিয়ে প্রত্যেকের আগ্রহের জায়গা ছিল যেমন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য যে কাজগুলো দৈনন্দিন করতে হয়, সেগুলো যাতে চালু থাকে; গ্রামীণ পর্যায়ের উন্নয়ন কার্যক্রম যেন চলমান থাকে, সেজন্য প্রথম দিকেই স্থানীয় যারা সরকারি কর্মচারী আছেন তাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
১৬ আগস্ট সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
এমন বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’–এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
Leave a Reply