সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষের তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসার পর আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ শেখ হাসিনার মতোই দেশ ছাড়তে যান। কিন্তু বিধিবাম; আটকে যেতে হয় তাদের।
এরইমধ্যে দলটির কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ও মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী সমর্থক কয়েকজনের কোনো সক্রিয়তা কিংবা খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদেরই একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ব্যারিস্টার সুমনের অবস্থান নিয়ে যখন নানা সমালোচনা ও চর্চা, সেই সময় ‘রূপকথা’র গল্পের মতো হাজির হলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওবার্তা দিলেন। যা পরবর্তীতে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইল থেকে শেয়ার করেন নিজের টাইমলাইনে রেখেছেন ব্যারিস্টার সুমন।
আলোচিত এ ব্যারিস্টারকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা যারা আমার সমর্থক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী বিভিন্ন সময় নানাভাবে আমার ওপর কষ্ট পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশে একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই। এই কোটা সংস্কার বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে সবসময় ছিলাম আমি। এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের পক্ষেও আমি ছিলাম। কিন্তু আমার ব্যর্থতা হচ্ছে আপনাদের সেটি বোঝাতে পারিনি। এ জন্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতার জন্য সব সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তাদের সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা এখন যে কাঠামোগত সংস্কার চাচ্ছেন, অথচ এই সংস্কারের জন্য দীর্ঘ বছর আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছি আমি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গত ১৫ বছরে যে দুই-তিনজন মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তাদের মধ্যে হয়তো আমাকে একজন পাবেন। আমি এস আলমের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে টাকা পাচারের জন্য মামলা করেছি।’
‘আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যিনি প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আমেরিকাতে তার নয়টি বাড়ি থাকা নিয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছি। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে দুদকে মামলা করেছি। জাতীয় সংসদে তার বিরুদ্ধে আমি বক্তব্য দিয়েছি। কর কমিশনার মতিউরের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে মামলা করেছি, ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন সম্পর্কে কথা বলেছি। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আমি নিজে মামলা করেছি, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার ৮ বছরের সাজা হয়েছে।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার জীবনে কত ঝুঁকি ছিল। কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে বাধ্য হয়েছি, জিডি করেছি যে আমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এই যুদ্ধে সবসময় আমি চেষ্টা করেছি। এখন আপনারা যে যুদ্ধ শুরু করেছেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এই যুদ্ধে সবসময় আমি দোয়া করি। এই যুদ্ধে সবসময় আমার জায়গা থেকে শরিক থাকার চেষ্টা করব।’
Leave a Reply