ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট বন্যা থেকে বিহারের রাজধানী পাটনাসহ আরো ১২ জেলাকে রক্ষায় ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি গেটের সবগুলো খুলে দিয়েছে ভারত। যার ফলে বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমের জেলাগুলোতে বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ বন্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে ফেনী, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, কুমিল্লাসহ আরো অনেক জেলায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দাবি উঠেছে, ফারাক্কার মতোই আরেকটি বাঁধ হোক বাংলাদেশে।
জানা যায়, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে কলকাতা বন্দরের কাছে হুগলী নদীতে পলি জমা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই পলি ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ফারাক্কা বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৬১ সালে বাঁধটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যা শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। এই বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল জলপ্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে চালিত করে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতি দেন। ঐ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে আসার আগে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। যদিও বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে দশ (২১ এপ্রিল ১৯৭৫ থেকে ২১ মে ১৯৭৫) দিনের জন্য ভারতকে গঙ্গা হতে ৩১০-৪৫০ কিউসেক পানি অপসারণের অনুমতি দেয়। এরপর এ যেন এক অলিখিত নিয়ম হিসেবেই ব্যবহার করেছে ভারত। বর্তমানে যার মাশুল গুনছে বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমানে এই বাধ বাংলাদেশের জনপদকে চুবিয়ে মারার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
এমন অনুধাবন থেকেই বাংলাদেশের জনগণ এখন বিকল্প চিন্তা করছেন। বন্যার ভোগান্তি থেকে দেশকে মুক্তি দিতে নতুন রূপরেখার প্রেক্ষাপট কল্পনা করছে বাংলাদেশিরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা লেখালেখি হচ্ছে।
ডিইউ ইনসাইডার নামক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের একটি গ্রুপে বলা হয়েছে- সময় এসে গেছে ফারাক্কার ৪০ কিলোমিটার দূরে ৭৫০০ ফিট উচ্চতার দ্বিতীয় ফারাক্কা বাধ নির্মাণের। মাঝরাতে মানুষের ঘুমন্ত অবস্থায় বাধ ছেড়ে দিয়ে তারা আজীবনই পৈশাচিক আনন্দ পায়। তারা বর্ষায় যা পানি দেবে এই ৪০ কিলোমিটারের মধ্যেই থাকবে আর যদি এর চেয়ে বেশি পানি ছাড়ে তো তাদের দেশেই সেই পানি চলে যাবে, কারণ তাদের বাঁধের উচ্চতা ৭৩৫০। আর গ্রীষ্মকালে তারা পানি দিতে চায় না, এই পানি আমরা তখন আমাদের সুবিধামতো নিয়ে নিব। তাই সময় এসেছে এখন আমাদের দ্বিতীয় বাধ নির্মাণের। আমরা চাইলেই সামনে দিয়ে আরেকটা বাঁধ নির্মাণ করতে পারি। বিদেশে পাচারকৃত টাকাগুলো এনে এই কাজ কার হোক।
বিউটি অব ডিইউ পেজে লেখা হয়েছে, ভারত ফারাক্কা বাঁধসহ দেশের অনেক নদীতে কয়েকটি করে বাঁধ তৈরি করে রেখেছে, এতে তারা ইচ্ছে মতো পানি ছাড়ে, ইচ্ছা মতো বাংলাদেশকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই চীনের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশেও অনুরূপ ড্যাম তৈরি করা উচিত। পানি মজুদ রাখা ও নদীতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এতে জলবিদ্যুৎ তৈরি করাও সম্ভব হবে। এছাড়াও দেশকে মরুভূমি ও বন্যা থেকে বাঁচানো যাবে, নৌপথে যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে। ভারতও সোজা হয়ে যাবে। এ দেশের টাকা পাচার না হলে, নিজেদের টাকায় এমন হাজারটা বাঁধ করা যেত। কারো সাহায্য লাগত না।
মুজাহিদ নামে একজন লিখেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এবং ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন! শিক্ষার্থীরাই এ দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে পারে। আর এমন কৃত্রিম বন্যার ষড়যন্ত্রও আমরা রুখে দিতে পারব। ইটের জবাব পাথরে দিয়ে দেওয়াই উপযুক্ত হবে। সময় হয়েছে ফারাক্কার উচ্চতায় দ্বিতীয় ফারাক্কা বাধ নির্মাণ করার।
এই বিষয়ে একটি পোস্টের কমেন্ট বক্সে জুনাইদ মিয়া নামের একজন লিখেছেন, আমাদের নতুন সরকার একটি উন্মুক্ত অ্যাকাউন্ট খুলে দিক। যেখানে দেশ ও প্রবাসের সবাই টাকা পাঠাতে পারবে। তবু দ্রুত বাধ নির্মাণ হোক। আমি বিশ্বাস করি, দেশপ্রেমিক সব প্রবাসী ভাইরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও ভালোবাসা দেশের প্রতি দেখাবেন।
Leave a Reply